পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ললিতা দেইখানে কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া থাকিয়া অতি ক্ষুদ্র একটা নিশ্বাস । কেলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল । পরদিন সকালে শেখর তাহার বাহিরের ঘরে বসিয়া সেইদিনের সংবাদপত্র পড়িতেছিল, নিরতিশয় বিস্ময়ের সহিত চোখ তুলিয়া দেখিল, গিরীন প্রবেশ করিতেছে। গিরীন নমস্কার করিয়া নিকটে চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল। শেখর প্রতিনমস্কার করিয়া সংবাদপত্রটা একপাশে রাখিয়া দিয়া জিজ্ঞাস্বমুখে চাহিয়া রহিল। উভয়ের চোখের পরিচয় ছিল বটে, কিন্তু আলাপ ছিল না এবং সে-পক্ষে আজ পর্য্যন্ত দু’জনের কেহই কিছুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করে নাই । গিরীন একেবারেই কাজের কথা পাড়িল । বলিল, বিশেষ প্রয়োজনে আপনাকে একটু বিরক্ত করতে এসেচি। আমার শাশুড়ীঠাকরুণের অভিপ্রায় আপনি শুনেচেন —বাড়িটা তিনি আপনাদের কাছে বিক্রি করে ফেলতে চান। আজ আমাকে দিয়ে বলে পাঠালেন, শীঘ্র যা হোক একটা বন্দোবস্ত হয়ে গেলেই তারা এই মাসেই মুঙ্গেরে ফিরে যেতে পারেন। গিরীনকে দেখিবামাত্রই শেখরের বুকের মধ্যে ঝড় উঠিয়াছিল, কথাগুলা তাহার কিছুমাত্র ভাল লাগিল না, অপ্রসন্ন-মুখে বলিল, সে ত ঠিক কথা, কিন্তু বাবার অবর্তমানে দাদাই এখন মালিক, তাকে বলা আবশ্যক। গিরীন মৃদু হাসিয়া বলিল, সে আমরাও জানি। কিন্তু তাকে আপনি বললেই ত ভাল হয় । শেখর তেমনিভাবেই জবাব দিল, আপনি বললেও হতে পারে। ও-পক্ষের অভিভাবক এখন আপনিই । গিরীন কহিল, আমার বলবার আবশ্যক হলে বলতে পারি ; কিন্তু কাল সেজদি বলছিলেন, আপনি একটু মনোযোগ করলে অতি সহজেই হতে পারে। শেখর মোট তাকিয়াটায় হেলান দিয়া বসিয়া এতক্ষণ কথা কহিতেছিল, সোজা হইয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, কে বললেন ? গিরীন বলিল, সেজদি—ললিতাদিদি বলছিলেন— শেখর বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। তার পরে গিরীন কি যে বলিয়া গেল তার একবিন্দুও তাহার কানে গেল না। খানিকক্ষণ বিহ্বল-দৃষ্টিতে তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিয়া উঠিল, আমাকে মাপ করবেন গিরীনবাবু, কিন্তু ললিতার সঙ্গে কি আপনার বিবাহ হয়নি ? গিরীন জিভ কাটিয়া বলিল, আজ্ঞে না—ওদের সকলকেই আপনি জানেনকালীর সঙ্গে আমার— কিন্তু সে-রকম ত কথা ছিল না । Հ 8br