পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত গিরীন ললিতার মুখে সব কথা শুনিয়াছিল, কহিল, না, কথা ছিল না, পে-কথা সত্য । গুরুচরণবাবু মৃত্যুকালে আমাকে অন্তরোধ করে গিয়েছিলেন আমি আর কোথাও যেন বিবাহ না করি। আমিও প্রতিশ্রত হই। তার মৃত্যুর পরে সেজদি আমাকে বুঝিয়ে বলেন,—অবগু, এ-সব কথা আর কেউ জানে না, যে, ইতিপূৰ্ব্বেই উর বিবাহ হয়ে গেছে এবং স্বামী জীবিত আছেন । এ কথা আর কেউ হয়ত বিশ্বাস করত না, কিন্তু আমি তার একটি কথাও অবিশ্বাস করিনি। তা ছাড়া, স্ত্রীলোকের একবারের অধিক বিবাহ হতে পারে না-ও কি ? শেখরের দুই চক্ষু বাপাকুল হইয়া উঠিয়াছিল, এখন এই বাপ অশ্রধারায় চোখের কোণ বাহিয়া গিরীনের সম্মুখেই ঝর ঝর করিয়া ঝরিয়া পড়িল । কিন্তু সেদিকে তাহার চৈতন্য ছিল না, তাহার মনেও পড়িল না, পুরুষের সম্মুখেই পুরুষের এই দুৰ্ব্বলতা প্রকাশ পাওয়া অত্যন্ত লজ্জাকর । গিরীন নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল । তাহার মনে মনে সন্দেহ ছিলই—আজ সে ললিতার স্বামীকে নিশ্চয়ই চিনিতে পারিল । শেখর চোখ মুছিয়া ভারি গলায় বলিল, কিন্তু আপনি ত ললিতাকে স্নেহ করেন ? - গিরীনের মুখের উপরে প্রচ্ছন্ন বেদনার গাঢ় ছায়া পড়িল, কিন্তু পরক্ষণেই সে মৃছ মৃত্ব হাসিতে লাগিল। আস্তে আস্তে বলিল, সে কথার জবাব দেওয়া অনাবগুক । তা ছাড়া, স্নেহ যত বড়ই হোক, জেনে-শুনে কেউ পরের বিবাহিত স্ত্রীকে বিবাহ করে না—যাক, গুরুজনদের সম্বন্ধে ও আলোচনা আমি করতে চাই নে, বলিয়া সে আর একবার হাসিয়া, উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, আজ যাই, আবার অন্য সময় দেখা হবে, বলিয়া নমস্কার করিয়া বাহির হইয়া গেল । গিরীনকে শেখর চিরদিনই মনে মনে বিদ্বেষ করিয়াছে, এইবার সে বিদ্বেষ নিবিড় ঘৃণায় পৰ্য্যবসিত হইয়াছিল, কিন্তু আজ সে চলিয়া যাইবামাত্র শেখর উঠিয়া আসিয়া ভূমিতলে বারংবার মাথা ঠেকাইয়া এই অপরিচিত ব্রাহ্ম-যুবকটির উদ্দেশে প্রণাম করিতে লাগিল। মানুষ নিঃশব্দে যে কত বড় স্বাৰ্থত্যাগ করিতে পারে, হাসিমুখে কি কঠোর প্রতিশ্রুতি পালন করিতে পারে, তাহ আজ সে প্রথম দেখিল । অপরাহ্লবেলায় ভূবনেশ্বরী নিজের ঘরে মেঝেয় বসিয়া ললিতার সাহায্যে নূতন বন্ধের রাশি থাক দিয়া সাজাইয়া রাখিতেছেন, শেখর ঘরে ঢুকিয় মায়ের শয্যার উপর গিয়া বসিল । আজ সে ললিতাকে দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া পলাইল না। মা চাহিয়া দেখিয়া বলিলেন, কি রে! २8* دهسسه