পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পচূর্ণ মাত্র মৌন থাকিয়া, অকস্মাৎ উদ্দীপ্ত হইয়া কহিল, তবে একথা মানি যে আমার মত গুণের স্বামী খুব কম মেয়েমানুষের ভাগ্যে জোটে । আমার কোন ইচ্ছাতেই তিনি বাধা দেন না । কিন্তু, এমন যদি না-ও হতো, তিনি যদি নিতান্তই অবিবেচক হতেন, তা হলেও তোমাকে বলচি ঠাকুরঝি, আমি নিজের সম্মান ষোল-আনা বজায় রাখতে পারতুম ; কিছুতেই তোমাদের মত এ-কথা ভুলতে পারতুম না যে, আমি সঙ্গিনী, সহধর্মিণী—র্তার ক্রীতদাসী নই। জানো ঠাকুরঝি, এমনি করেই আমাদের দেশের সমস্ত মেয়েমানুষ পুরুষের পায়ে মাথা মুড়িয়ে এত তুচ্ছ, এমন খেলার পুতুল হয়ে দাড়িয়েচে । নিজের সন্ত্রম নিজে না রাখলে, কেউ কি দেয় ঠাকুরবি ? কেউ না । আমার ত এমন স্বামী, তবুও কখনও তাকে আমি এ-কথা ভাববার অবকাশ দিইনি— তিনিই প্রভু, আর আমি স্ত্রী বলে তার বাদী। অামার নারীদেহেও ভগবান বাস করেন, এ-কথা আমি নিজেও ভুলিনে—তাকেও ভুলতে দিইনে ! বিমলা চুপ করিয়া শুনিয়া একটা নিশ্বাস কেলিল ; কিন্তু তাহাতে লজ্জা বা অনুশোচনা কিছুই প্রকাশ পাইল না । কহিল, জানিনে বেী, আত্মসন্ত্রম আদায় করা কি ; কিন্তু তার পায়ে আত্মবিসর্জন দেওয়া বুঝি। ঐ যে উনি এলেন ; একটু বসে ভাই ; আমি শীগগির হুকুম নিয়ে আসি, বলিয়া, হঠাৎ একটু মুখ টিপিয়া হাসিয়া দ্রুতপায়ে প্রস্থান করিল। ইন্দু এ হাসিটুকু দেখিতে পাইল । তার সর্বাঙ্গ রাগে রি রি করিয়৷ জলিতে লাগিল । বায়স্কোপ হইতে ফিরিবার পথে ইন্দু হঠাৎ বলিয়া উঠিল, ঠাকুবুঝি, হুকুম না পেলে ত তুমি আসতে পারতে না । বিমলা পথের দিকে চাহিয়৷ অন্যমনস্ক হইয়া কি জানি কি ভাবিতেছিল, বলিল, না । তাই আমার মনে হয় ঠাকুরবি, আমি যখন তখন এসে তোমাকে ধরে নিয়ে যাই বলে, তোমার স্বামী হয়ত রাগ করেন । বিমলা মুখ ফিরাইয়া কহিল, তা হলে আমি নিজেই বা যাব কেন বৌ! বরং আমার ভয় হয়, তুমি এমন করে এসে বলে দাদা হয়ত মনে মনে আমার উপর বিরক্ত ट्रन । ইন্দু সগৰ্ব্বে কহিল, তোমার দাদার সে স্বভাব নয়। একে ত কখনো তিনি নিজের অধিকারের বাইরে পা দেন না, তা ছাড়া আমার কাজে রাগ করবেন, আমি ঠিক জানি, এ পদ্ধা তার স্বপ্নেও আসে না । &s-3ళి