পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আনি । উঃ—কি মুখের ঘর-কন্নাই হয়েচে আমার ! বলিয়া সক্রোধে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া কহিল, কিন্তু কেন ? কিসের জন্য হিসেব লিখতে যাব—আমি কি মিথ্যে বলি ? আমার মামাত বোনের বিয়েতে কাপড়জামা লাগল—পঞ্চাশ টাকার ওপর । কমলার জামা দুটোর দাম বার টাকা—সেদিন বায়ুস্কোপে খরচ হ’লো দশ টাকা—খতিয়ে দেখ দেখি, বাকি থাকে কত ? তাতে এই দশ-পলর দিন সংসার-খরচটা কি এমন বেশি যে, তোমার দু'চোখ কপালে উঠেচে ! আমার দাদার সংসারে মাসে সাত-আটশ' টাকাতেও যে হয় না। সত্যি বলচি, এমন করলে ত আমি আর ঘরে টিকতে পারিনে। তার চেয়ে বরং স্পষ্ট বল, দাদা মেদিনীপুরে বদলি হয়েচেন, আমি মেয়ে নিয়ে চলে যাই—আমিও জুড়েই, তুমিও বঁাচ ! নরেন্দ্র অনেকক্ষণ ঘাড় হেঁট করিয়া থাকিয়া, মুখ তুলিয়া কহিল, এ-বেলায় ত হবে না, দেখি যদি ও বেলায় কিছু যোগাড় করতে পারি। তার মানে ? যোগাড় না করতে পার, উপোস করতে হবে নাকি ? দেখ, কালই আমি মেদিনীপুরে যাব। কিন্তু তুমি এক কাজ কর । এই দালালী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে, দাদাকে ধরে একটা চাকরি যোগাড় করে নাও । তাতে বরঞ্চ ভবিষ্যতে থাকবে ভাল ; কিন্তু যা পার না, তাতে হাত দিয়ে নিজেও মাটি হয়ে না, আমাকেও নষ্ট ক'রো না | নরেন্দ্র জবাব দিল না। ইন্দু আরও কি বলিতে যাইতেছিল ; কিন্তু এই সময় বেহারাটা শস্তুবাবুর আগমন-সংবাদ জানাইল, এবং পরক্ষণেই বাহিরে জুতোর পদশব্দ শোনা গেল। ইন্দু পার্থের দ্বার দিয়া পর্দার আড়ালে সরিয়া দাড়াইল । শস্তুবাবু মহাজন। নরেন্সের পিতা বিস্তর ঋণ করিয়া স্বৰ্গীয় হইয়াছেন। পুত্রের কাছে তাগাদ করিতে শস্তুবাবু প্রায়ই শুভাগমন করিয়া থাকেন। আজিও উপস্থিত হইয়াছেন। তিনি মৃদুভাষী আসন গ্রহণ করিয়া ধীরে ধীরে এমন গুটি-কয়েক কথা বলিলেন, যাহা দ্বিতীয়বার শুনিবার পূৰ্ব্বে অতি-বড় নির্লজ্জও নিজের মাথাটা বিক্রয় করিয়া ফেলিতে দ্বিধা করিবে না। শস্তুবাবু প্রস্থান করিলে, ইন্দু আর একবার মুমুখে আসিয়৷ দাড়াইল । জিজ্ঞাস করিল, ইনি কে ? শঙ্কুবাৰু। তার পরে ? কিছু টাকা পাবেন, তাইতে এসেছিলেন । সে টের পেয়েচি ৷ কিন্তু, ধার করেছিলে কেন ? নরেন্দ্র এ প্রশ্নের জবাবটা একটু ঘুরাইয়া দিল। কহিল, বাবা হঠাৎ মারা গেলেন, তাই--- Rose