পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পচূর্ণ মানুষ বোঁ কিন্তু কি যত্ন, কি স্বামী-সেবা । তার পুণ্যেই এ-যাত্র তিনি রক্ষে পেয়ে গেলেন—নইলে ডাক্তার-বষ্ঠির সাধ্য ছিল না। অম্বিকাবাৰু কে ? কি জানি, ঘাটালের কাছে কোথায় বাড়ি। চিকিৎসার জন্য এখানে এসে আমাদের ঐ পাশের বাড়িটা ভাড়া নিয়েচেন । লোকজন নেই, পায়সা-কড়িও নেই, —শুধু বৌটি— ইন্দু মাঝখানেই প্রশ্ন করিল, তোমার দাদার বুঝি খুব বেড়েছিল ? বিমলা ওষ্ঠাধর কুঞ্চিত করিয়া কহিল, সে-রাতে আমার ত সত্যিই ভয় হয়েছিল। ঐ তাকের ওপর ওষুধের খালি শিশিগুলো চেয়ে দেখ নাতিনজন ডাক্তার—আর,-আচ্ছা বে, দাদা বুঝি এসব কথা তোমাকে চিঠিতে লেখেনি ? ইন্দু অন্যমনস্কের মত কহিল, না । বিমলা জিজ্ঞাসা করিল, এখানে এসে বুঝি শুনলে ? ইন্দু তেমনিভাবে জবাব দিল, হা। বিমলা বলিতে লাগিল, আমি ত তোমাকে প্রথম দিনেই টেলিগ্রাম করতে চেয়েছিলুম ; মাত্র দু-তিন ঘণ্টার পথ স্বচ্ছন্দে আসতে পারতে, কিন্তু দাদা কিছুতেই দিলেন না। হাসিয়া কহিল, কি যে তাকে তুমি করেচ তা তুমিই জানো বোঁ, পাছে অস্থখ শরীরে তুমি ব্যস্ত হও, এই ভয়ে কোনমতেই খবর দিতে চাইলেন না। যাক— ঈশ্বরেচ্ছায় ভাল হয়ে গেছে—নইলে— নইলে তার কি হ’তো ঠাকুরবি ! অমুখ সারতেও আমাকে দরকার হয়নি, না সারলেও হয়ত দরকার হতো না। বলিয়া উঠিয়া গিয়া, ঔষধের শূন্ত এবং অৰ্দ্ধশূন্ত শিশিগুলা নাড়িয়া লেবেলের লেখা পড়িয়া দেখিতে লাগিল । কিন্তু এ কি হইল ? কখনও যাহা হয় নাই—আজ অকস্মাৎ তাহার দুই চোখ অশ্রুতে ঝাপা হইয়া গেল। কেন, সে কি কেহ নয় যে, এতবড় একটা কাগু হইয়া গেল, অথচ তাহাকে জানানো পর্য্যন্ত হইল না। সে নিজের এমন কি পীড়ার কথা লিখিয়াছিল যাহাতে সংবাদ দেওয়াটাও কেহ উচিত মনে করিলেন না ! তিনি ভাল হইয়াও ত কতকগুলো পত্রে কত কথা লিখিলেন, শুধু নিজের কথাটাই বলিতে ভুলিলেন। বেশ, এখানে আসিয়াও ত তিনদিন হইল, তৰু কি মনে পড়িল না ? ইন্দুর তীব্র অভিমানের স্বর বিমলা টের পাইয়াছিল। ফিরিয়া আসিয়া বলিল, শিশি-বোতল নাড়াচাড়া করে আর কি হবে বোঁ, ওরা কখনও মিথ্যে সাক্ষী দেবে না, তা যতই জোর কর না। এলো তোমাৱ চ দেওয়া হয়েচে । &o