পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পচূর্ণ কোন প্রকার খরচের কথাতেই নরেন্দ্র ভয় পাইত। এই একটা বড় রকমের ইঙ্গিতে তাহার মেজাজ একেবারে বিগড়াইয়া গেল। প্রশ্ন করিল, এই ডাক্তারটিকে আসতে বললে কে ? ইন্দু জবাব দিবার পূৰ্ব্বে সে পুনরায় কহিল, বিমলাকে বোলে আমার পিছনে ডাক্তার লাগিয়ে উত্যক্ত করবার আবশ্বক নেই, আমি ভাল আছি। বিমলা প্রচ্ছন্ন থাকিয়া ডাক্তার পাঠাইতেছে,–বিমলাই সব। ইন্দু অন্তরে আঘাত পাইল। তৰু চাপা দিয়া বলিল, কিন্তু তুমি ত সত্যই ভাল নেই। ব্যথাটা ত সারেনি । সেরেচে । তা হলেও শরীর সারেনি—বেশ দেখতে পাচ্ছি। একবার ঘুরে এলে, আর যাই হোকৃ—মন্দ কিছু ত হবে না। নরেন্দ্র ভিতরে-বাহিরে এমন জায়গায় উপস্থিত হইয়াছিল যেখানে সহা করিবার ক্ষমতা নিঃশেষ হইয়াছিল। তবুও ধাক্কা সামলাইয়া বলিল, আমার ঘুরে বেড়াবার সামর্থ্য নেই। ইন্দু জিদ করিয়া বলিল, সে হবে না। প্রাণটী ত বাচানো চাই । এই জিদটা ইন্দুর পক্ষে এতই নূতন যে, নরেন্দ্র সম্পূর্ণ ভুল করিল। তাহার নিশ্চয়ই মনে হইল, তাহাকে ক্লেশ দিবার ইহা একটা অভিনব কৌশল মাত্র। এতদিনের ধৈর্ঘ্যের বাধন তাহার নিমেষে ছিন্ন হইয়া গেল। চেঁচাইয়া উঠিল, কে বললে প্রাণ বাচানো চাই ? না, চাই না। তোমার পায়ে পড়ি ইন্দু, আমাকে রেহাই দাও, আমি নিশ্বাস ফেলে বাচি । স্বামীর কাছে কটু কথা শোনা ইন্দু কল্পনা করিতেও পারিত না । সে কেমন যেন জড়-সড় হতবুদ্ধি হইয়া গেল। কিন্তু নরেন্দ্র জানিতে পারিল না ; বলিতে লাগিল, তুমি ঠিক জানো আমি কি সঙ্কটের মাঝখানে দিন কাটাচ্চি। সমস্ত জেনে-স্তনেও আমাকে কেবল কষ্ট দেবার জন্যেই অহৰ্নিশি খোচাচ্চ। কেন, কি করেচি তোমার ? কি চাও তুমি ? ইন্দু ভয়ে বিবর্ণ হইয়া রহিল। একটা কথাও তাহার মুখ দিয়া বাহির হইল না। চেঁচামেচি উত্তেজন নরেন্দ্রর পক্ষে যে কিরূপ অস্বাভাবিক, তাহা এইবার সে নিজেই টের পাইল। কণ্ঠস্বর নত করিয়া বলিল, বেশ, স্বীকার করলুম আমার হাওয়া বদলানো আবগুক, কিন্তু কি করে যাব ? কোথায় টাকা পাব ? সংসার খরচ যোগাতেই যে আমার প্রাণ বার হয়ে যাচ্চে ! ইন্দু নিজে কোনও দিন ধৈর্ঘ্য শিক্ষা করে নাই ; অবনত হইতে তাহার মাথা २१६