পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পচূর্ণ কিছুদিন হইতে ব্যাপারটার উপর সকলের দৃষ্টি পড়িয়াছে এবং প্রায়ই আলোচনা হইতেছে। ছোট ভগিনীপতির ঘরে সকলের সম্মুখে পাছে এই কথাটাই উঠিয়া পড়ে, এই ভয়েই ইন্দু অসময়ে পলাইয়া ঘরে ঢুকিয়াছিল। স্বামী আসেন না। র্তাহার অবহেলায় বেদনা কত, সে ইন্দুর নিজের কথা—সে যাক। কিন্তু ইহাতে এত যে ভয়ানক লজ্জা, এ-কথাসে ত একদিনও কল্পনা করে নাই! ভ্রণহত্য, নরহত্যার মত এ যে কেবল লুকাইয়া ফিরিতে হয়! মরিয়া গেলেও যে কাহারো কাছে স্বীকার করা যায় না, স্বামী ভালবাসেন না। এতদিন স্বামীর ঘরে স্বামীর পাশে বসিয়া তাহাকে টানিয়া পিটিয়া নিজের সন্ত্রম ও মর্য্যাদা বাড়াইয়া তুলিতেই সে অহরহ ব্যস্ত ছিল, কিন্তু এখন পরের ঘরে, চোখের আড়ালে সমস্তই যে ভাঙ্গিয়া ধ্বসিয়া পড়িতেছে—কি করিয়া সে খাড়া করিয়া রাখিবে ? আজ ভগিনীপতি আসার পর হইতে যে-কেহ তাহার পানে চাহিয়াছে, তাহার মনে হইয়াছে, তাহাকে করুণা করিতেছে। কমলাকে কেহ তাহার পিতার কথা জিজ্ঞাসা করিলে ইন্দু মরমে মরিয়া যায়, বাড়ি ফিরিবার প্রশ্ন করিলে লজ্জায় মাটিতে মিশিতে চায় । অথচ, আসিবার পূৰ্ব্বে স্বামীকে সে অনেকগুলো মৰ্ম্মান্তিক কথায় বলিয়া আসিয়াছিল, প্রতিপালন করিবার ক্ষমতা হইলে যেন লইয়া আসে। হঠাৎ ইন্দুর মোহের ঘোর কাটিয়া গেল—কমলা, কাদচিস্ কেন মা ? কমলা রুদ্ধস্বরে বলিল, বাবার জন্যে মন কেমন কচ্চে । ইন্দুর বুকের উপর যেন হাতুড়ির ঘা পড়িল, সে মেয়েকে প্রাণপণে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ফুপাইয়া কাদিয়া ফেলিল। বাহিরের প্রবল বারিবর্ষণ তাহার লজ্জা রক্ষা করিল—কন্যা ছাড়া এ কান্না আর কেহ শুনিতে পাইল না। তাহার জননী শিখাইয়া দিলেন কি না জানি না, পরদিন সকাল হইতেই কমলা পিতার কাছে যাইবার জন্য বায়না ধরিয়া বসিল। প্রথমে ইন্দু অনেক তর্জন-গর্জন করিয়া, শেষে দাদাকে আসিয়া কহিল, কমলা কিছুতেই থামে ন—কলকাতায় যেতে চায় । দাদা বলিলেন, থামাবার দরকার কি বোন, কাল সকালেই তাকে নিয়ে যা। কেমন আছে নরেন ? সে আমাকে ত চিঠিপত্র লেখে না, তোকে লেখে ত? ইন্দুঘাড় হেট করিয়া বলিল, ছ। ভাল আছে ত ? ইন্দু তেমনি করিয়া জানাইল, আছেন। Հե e