পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোঝা শুভকৰ্ম্ম নির্বিঘ্নে সমাধা হইয়া যাইবার পর সত্যেন্দ্র বাট যাইতে চাহিল, কিন্তু গৃহিণী তাহাতে বিশেষ আপত্তি করিলেন, বলিলেন, এতদিন পরে এসেচ, আরও কিছুদিন থাকতে হবে। সরলাও ছাড়িল না, সুতরাং আরও দুই-চারিদিন থাকিতে সত্যেন্দ্র সম্মত হইল । দুই-চারিদিন কাটিয়া গেল, তবু সরলা ছাড়িতে চাহে না । কিন্তু না যাইলেও নহে, পড়াশুনার বিশেষ ক্ষতি হয় ; পরীক্ষারও অধিক বিলম্ব নাই। আসিবার সময় সরল জিজ্ঞাসা করিল, অামাকে আবার কবে নিয়ে যাবে ? সত্যেন্দ্ৰ কহিল, যখন যাবে তখনই। তা হলে আমাকে দশ-যারদিন পরেই নিয়ে যও । সত্যেন্দ্র অতিশয় আহলাদিত হইল। সে এতটা ভাবে নাই । তখন অশ্রজলের মধ্যে সরলা স্বামীকে বিদায় দিয়া হাসিয়া বলিল, দেখো, অামার জন্ত যেন ভেবে না, আর রাত্রি পর্য্যস্ত পড়ে যেন অমুখ না হয় । রাত্রি দশটার অধিক না পড়িবার জন্য সরল বিশেষ করিয়া মাথার দিব্যি দির দিল । কি একটা উদাস-পার প্রাণ লইয়া সত্যেন্দ্র সেইদিন কলিকাতায় পৌছিল । সত্যেন্দ্র একখানা পুস্তক লইয়া বসিয়াছিল। পুস্তকের পৃষ্ঠার সহিত মনের একটা বিযম দ্বন্দ্ব যুদ্ধ চলিয়াছিল। সত্যেন্দ্র গনিয়া দেখিল, সমস্তদিনে মোটে ছাব্বিশ লাইন পড়া হইয়াছে। দুঃখিতভাবে সে ভাবিল, বা ! এইরকম পড়লেই পাশ হব ! ক্রমে দুঃখ ঈষৎ ক্ৰোধে পরিণত হইল। সে ভাবিল, সমস্ত পোড়ামুখী সরোর দোষ । এই পাচদিন এসেচি, একটুকুও পড়তে পারিনি। আগে মনে হ'তো পড়ার সময় বিরক্ত করে, দশটার বেশি পড়তে গেলেই আলো নিভিয়ে দেয়, একে কোথাও পাঠিয়ে দিলে ভাল করে পড়বো । ঠিক উণ্টে ! কালই তাকে আনতে যাবো, না হলে লজ্জার খাতিরে কি ফেল হবো ? যাহা হৌক, সত্যেন্দ্রনাথ এইরূপ একটা মতলব আঁটিতেছিল—কি করিয়া আনাই | কেমন করিয়াই বা বলি ? লজ্জা করে। এত ভালই বা বাসিলাম কেমন করিয়া ? फूनिन একটা ভূত্য আসিয়া একখানা টেলিগ্রাম হাতে দিল, সত্যেন্দ্র অতিশয় বিক্ষিত হইল, আর ভাবিবার সময় নাই ; কোথাকার টেলিগ্রাম ? কভার খুলিতে সত্যের হৃৎকম্প হইল। ভিতরে যাহা লেখা ছিল, তাহাতে মাথা একেবারে ঘুরিয়া গেল। সরলা পীড়িত। সেইদিনই হরদেববাবু সত্যেন্দ্রকে লইয়া দিলজানপুর যাত্রা করিলেন। Հթծ