পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোঝা দুঃখের কথা যদি কেহ আগ্রহ করিয়া শ্রবণ করে, তাহা হইলে বোধ হয় তাহার স্কায় বন্ধ এ-জগতে আর নাই। ইহার পর সত্যেন্দ্ৰ নলিনীকে প্রায়ই পূৰ্ব্বের কথা জানাইত। কত নিশা দুইজনের সেই একই কথায় অবসান হইত। সত্যেন্দ্র যে কেবল বলিত তাহা নহে, নলিনী আগ্রহের সহিত স্বামীর পূৰ্ব্ব-ভালবাসার কথা শুনিতে ভালও বাসিত । পঞ্চম পরিচ্ছেদ দুই বৎসর পরে দুই বৎসর গত হইয়াছে, নলিনীর বয়স এখন আঠার বৎসর, তাহার আর পূর্কের মত কষ্ট নাই। স্বামী এখন আর তাহাকে অযত্ন করেন না । স্বামীর ভালবাসা জোর করিয়া সে লইয়াছে। যে জোর করিয়া কিছু লইতে জানে, সে তাহা রাখিতেও জানে, তাহার এখন আর কোন কষ্টই নাই। সত্যেন্দ্রনাথ এখন পাবনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট । স্ত্রীর যত্নে, স্ত্রীর ঐকাস্তিক ভালবাসায় তাহার অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। কাছারির কৰ্ম্মের অবকাশে সে এখন নলিনীর সহিত গল্প করে, উপহাস করে, গান-বাজনা করিয়া আমোদ পায়। এক কথায়, সত্যেন্দ্র অনেকটা মানুষ হইয়াছে! মানুষ ধেটা পায় না, সেইটাই তাহার অত্যন্ত প্রিয় সামগ্ৰী হইয়া দাড়ায় । মতুযু-চরিত্রই এমনি । তুমি অশান্তিতে আছ, শাস্তি খুজিয়া বেড়াও—আমি শাস্তিভোগ করিতেছি, তবুও কোথা হইতে যেন অশাস্তিকে টানিয়া বাহির করি । ছল ধরা যেন মানুষের স্বভারসিদ্ধ ভাব । যে মাছটা পলাইয়া যায়, সেইটাই কি ছাই বড় হয়! সত্যেন্দ্রনাথও মানুষ । মানুষের স্বভাব কোথায় যাইবে ? এত ভালবাসা, যত্ন ও শাস্তির মধ্যে তাহার হৃদয়ে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের মত অশাস্তি জাগিয়া উঠে। নিমিষের মধ্যে মনের মাঝে বৈদ্যুতিক ক্রিয়ার মত যে বিপ্লব বাধিয়া যায়, তাহা সামলাইয়া লইতে নলিনীর অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় । মাঝে মাঝে তাহার মনে হয়, বুঝি আর সে সামলাই৩ে পরিবে না। এতদিনের চেষ্টা, যত্ন, অধ্যবসায় সমস্তই বুঝি বিফল হইয়া যাইবে । নলিনীর এতটুকু ক্রটি দেখিলে, সত্যেন্দ্র ভাবে সরলা থাকিলে বোধ হয় এমনটি হুইত না । হইত কি না ভগবান জানেন, হয়ত হইত না, হয়ত ইহা অপেক্ষ চতুগুণ হইত। কিন্তু তাহাতে কি ? সে মৎস্ত যে পলাইয়া গিয়াছে! সত্যেন্দ্র এখনও সরলকে ভুলিতে পারে নাই । কাছারি হইতে আসিয়া যদি নলিনীকে সে না দেখিতে পায়, অমনি মনে করে, কিসে জার কিসে । ২৯৭ -9*