পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোঝা গরম ছুটিত না। বিধাতার ইচ্ছা—বহু চেষ্টায় আজও নলিনী সাতটার পূৰ্ব্বে ফিরিতে পারিল না । আসিয়া সে দেখিল, সত্যেন্দ্র সংবাদপত্র পাঠ করিতেছে, তখনও কিছু আহার করে নাই। খাওয়াইবার ভার নলিনী আপন হস্তেই রাখিয়াছিল। কাছে অসিলে সত্যেন্দ্র হাসিল, কিন্তু সে হাসি নলিনীর ভাল বোধ হইল না। সে অস্তরে শিহরিয়া উঠিল। আসন পাতিয়া নলিনী জলখাবার খাওয়াইতে চেষ্টা করিল, কিন্তু সত্যেন্দ্র কিছু স্পর্শ করিল না। ক্ষুধা একেবারেই নাই। বহু সাধ্যসাধনাতেও সে কিছু খাইল না। নলিনী বুঝিল, এ অভিমান কেন। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ কপাল ভাঙ্গিয়াছে কি ? আজ হেমাঙ্গিনী শ্বশুরবাড়ি যাইবে । তাহার স্বামী উপেন্দ্রবাবু তাহাকে লইতে আসিয়াছেন। নলিনী বহু দিবস হেমার সহিত দেখা করিতে যায় নাই। তাই আজি হেম অনেক দুঃখ করিয়া তাহাকে যাইতে লিখিয়াছে। নলিনী প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, স্বামীর অনুমতি বিনা সে আর কোথাও যাইবে না ; কিন্তু আজ সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে গেলে প্রিয়-সর্থীর সহিত আর দেখা হয় না । নলিনী বড় বিপদে পড়িল । হেমা লিখিয়াছে, তাহারা তিনটের ট্রেনে রওনা হইবে । তাহা হইলে স্বামীর অনুমতি লওয়া কি করিয়া হয় ? বহু কু-তর্কের পর নলিনী যাওয়াই স্থির করিল। যাইবার সময় দাসীকে সে বলিয়া দিল, যেন ঠিক তিনটের সময় রায়েদের বাড়িতে গাড়ি পাঠান হয় । গাড়ি পাঠানও হইয়াছিল, কিন্তু হেমার তিনটার ট্রেনে যাওয়া হইল না। স্বতরাং সে নলিনীকে কিছুতেই ছাড়িয়া দিল না। অনেক জিদ করিয়াও সে হেমার হাত এড়াইতে পারিল না । হেমা আজ অনেক দিনের জন্য চলিয়া যাইতেছে। কতকাল আর দেখা হইবে না-সহজে কে ছাড়িয়া দেয় ? বাটী ফিরিতে বিলম্ব হইলে স্বামী রাগ করিবেন, এ-কথা বলিতে নলিনীর লজ্জা হুইতেছিল—সহজে এ-কথা কে বলিতে চাহে ? এ হীনতা কে স্বীকার করে ? বিশেষ এই বয়সে ? অবশেষে সে-কথাও সে বলিল, কিন্তু হেমা তাহা বিশ্বাস করিল না। সে হাসিয়া বলিল, বোকা বুঝিও না। রাগারগির ব্যাপার আমি ঢের বুঝি । উপেনবাবুও অনেক রাগ করতে জানেন । কথাটা হেমা হাসিয়া উড়াইয়া দিল, কিন্তু নলিনী মৰ্ম্মে পীড়া পাইল । সকলের স্বামী কি এক ছাচে গড় ? সকলেই কি উপেনবাবুর মত ? ২৯৯