পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নলিনী যখন ফিরিয়া জাসিল, তখন রাত্রি দশটা বাজিয়া গিয়াছে। আসিয়া সে শুনিল, বাৰু বাহিরে শয়ন করিয়াছেন । মাতঙ্গিনী ওরফে মাতু, নলিনীর বাপের বাড়ির ঝি, সে নলিনীর সহিত আসিয়াছিল। অনেকদিনের লোক, বিশেষ সে নলিনীকে অত্যন্ত স্নেহ কল্পিত । তাই সে নলিনীকে আজ বিলক্ষণ দশ কথা জানাইয়া দিল । বাটীর মধ্যে সে-ই কেবল জানিত, সত্যবাবু বিলক্ষণ রাগ করিয়াই বাহিরে শয্যা রচনা করিবার আদেশ দিয়াছিলেন । গভীর রাত্রে যখন শয্যায় শয়ন করিয়া চক্ষু মুদ্রিত করিয়া সত্যেন্দ্রনাথ পূৰ্ব্ব-স্মৃতি জাগাইয়া তুলিবার চেষ্টা করিতেছিল, যখন সেই বহুদিনগত প্রফুল্ল-কমলসদৃশ সরলার মুখের সহিত নলিনীর মুখের ঈষৎ সাদৃপ্ত আছে কিনা বিবেচনা করিতেছিল, যখন সরলার ভালবাসার নিকট নলিনীর ভালবাসা, সাগরের নিকট গোপদের জল ধারণা করিবার জন্য মনের মধ্যে বিষম ঝটিকার উৎপত্তি করিতেছিল, তখন ধীরে ধীরে দ্বার খুলিয়া নলিনী সে গৃহে প্রবেশ করিল। সত্যেন্দ্র চাহিয়া দেখিল নলিনী। নলিনী আসিয়া সত্যেন্দ্রর পদতলে বসিল। সত্যেন্দ্র চক্ষু মুদ্রিত করিল। বহুক্ষণ এইভাবেই কাটিয়া গেল দেখিয়া সত্যেন্দ্রনাথ বিরক্ত হইল, পার্শ্ব পরিবর্তন করিয়া পরুষভাবে স্পষ্ট-স্বরে কহিল, তুমি এখানে কেন ? নলিনী কাদিতেছিল, কথা কহিতে পারিল না। কান্না দেখিয়া ডেপুটিবাবু আর একটু ক্রুদ্ধভাবে বলিল, রাত হয়েচে, যাও, ভিতরে গিয়ে শোও গে। নলিনী কাদিতেছিল ; এবার চক্ষের জল মুছিয়া সে বলিল, তুমি শোবে চল । সত্য ঘাড় নাড়িল, বলিল, আমার ঘুম পেয়েচে, আর উঠতে পারব না। কাদিলে সত্যেন্দ্র বিরক্ত হয় । নলিনী চক্ষের জল মুছিয়াছে স্বামীর কাছে আর সে র্কাদিবে না। ধীরে ধীরে পায়ের উপর হাত রাখিয়া নলিনী বলিল, এবার অামাকে ক্ষমা কর । এখানে তোমার বড় কষ্ট হবে, ভিতরে চল । সত্যেন্দ্র আর ভিতরে যাইবে না প্রতিজ্ঞা করিয়াছে। সে বলিল, কষ্টের কথা এত রাত্রে আর ভেবে কাজ নেই ; তুমি শোও গে, আমিও ঘুমাই। নলিনী সত্যেন্দ্রকে চিনিত । সমস্ত রাত্রি সে আপনার ঘরে বসিয়া কাদিয়া কাটাইল । বলি, ও হেমাঙ্গিনী, একবার দেখিয়া গেলে না ? রাগারগির ব্যাপার তুমি বোঝ ভাল—একবার মিটাইয়া দিবে না কি ? পরদিনও সত্যেন্দ্র বাটীর ভিতর আসিল না, বা নলিনীর সহিত সাক্ষাৎ করিল না। নলিনীর একখানা পত্র মাতু সত্যেন্দ্রের হাতে দিয়াছিল। সেখানা না পড়িয়াই মাতঙ্গিনীর সন্মুখে ছিড়িয়া ফেলিয়া দিয়া বলিল, এ-সব আর এনে না। চারি-পাচদিন পরে একদিন নলিনীর বড় দাদা শ্ৰীযুক্ত নরেন্দ্রবাবু পাবনার \3ф е