পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাত্রি বোধ হয় তৃতীয় প্রহয়, কিন্তু নাচ শেষ হইতে তখনও বিলম্ব আছে । বিশ্বকৰ্ম্মার পূজা সকালেই শেষ হইয়াছে, কিন্তু তাহারই জের টানিয়া ভক্তের দল মদ খাইয়া, মাংস খাইয়া, খাম্‌টা নাচাইয়া একটা দক্ষযজ্ঞের সমাপ্তি করিতেছি। অধিকাংশেরই কাগু-জ্ঞান বোধ হয় আর নাই, আর তাহারই মাঝখানে বসিয়া স্মিতমুখে বৃদ্ধ গুরুচরণ। কে একজন চাদরে মুখ ঢাকিয়া ধীরে ধীরে পিঠের উপর হাত রাথিতেই চমকাইয়া ফিরিয়া চাহিয়া কহিলেন, কে। লোকটি কহিল, আমি পরেশ । জ্যাঠামশাই, বাড়ি চলুন। গুরুচরণ দ্বিরুক্তি করিলেন না, বলিলেন, বাড়ি ? চল । উংসব-মঞ্চের একটা ক্ষীণ আলোক রাস্তায় আসিয়া পড়িয়াছিল ; সেইখানে আসিয়া পরেশ একদৃষ্টি গুরুচরণের মুখের প্রতি চাহিয়া রহিল। চোখে সে জ্যোতি নাই, মুখে সে তেজ নাই, সমস্ত মানুষটাই যেন ভূভাবিষ্টের ন্যায়। এতদিন পরে তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল, এবং এতদিন পরে আজি তাহার চোখে ঠেকিল, লোকের কাছে জ্যাঠামশায়ের জন্য লজ্জা পাইবার কিছু আর নাই। এই অৰ্দ্ধ-সচেতন দেহ ছাড়িয়া তিনি অন্তহিত হইয়া গেছেন ; কহিল, আপনার কাশী যাবার বড় ইচ্ছে জ্যাঠামশাই, যাবেন ? গুরুচরণ কঙালের মত বলিয়া উঠিলেন, যাবে পরেশ, যাবে, কিন্তু কে আমাকে নিয়ে যাবে ? পরেশ কহিল, আমি নিয়ে যাবো জ্যাঠামশাই । তবে চল, একবার বাড়ি থেকে জিনিস-পত্র নিয়ে আসি গে। পরেশ কহিল, না জ্যাঠামশাই, ও-বাড়িতে আর না। ওর কিছু আমরা চাইনে । গুরুচরণের হঠাৎ যেন ছ’স হইল। ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া কহিলেন, কিছু চাইনে ? ও-বাড়ির আমরা কিছুটি চাইনে ? পরেশ চোখ মুছিয়া বলিল, না জ্যাঠামশাই, কিছুটি চাইনে। ও-সব নেবার অনেক লোক আছে-চলুন । চল, বলিয়া গুরুচরণ পরেশের হাত ধরিলেন, এবং জনহীন অন্ধকার পথ ধরিয়া উভয়ে রেলওয়ে স্টেশনের অভিমুখে অগ্রসর হইয়া গেলেন। ులిల