পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরিচরণ এখন হরিচরণের কথা ৰলি। দুর্গাদাসবাবু বাহিরে বসিবার ঘরেই রাত্রে শয়ন করিতেন। তাহার কারণ অনেকেই অবগত নহে। আমার বোধ হয় গৃহিণী বাপের বাড়িতে থাকায়, বাহিরের ঘরে শয়ন করাই তাহার অধিক মনোনীত ছিল । রাত্রে দুর্গাদাসবাবুর শয্যা রচনা করা, তিনি শয়ন করিলে তাহার পদসেবা ইত্যাদি কাজ হরিচরণের ছিল। পরে বাবুর রীতিমত নিদ্রাকর্ষণ হইলে হরিচরণ পাশের একটি ঘরে শুইতে যাইত। সন্ধ্যার প্রাক্কালেই হরিচরণের মাথা টিপ টপ করিতে লাগিল। হরিচরণ বুঝিল, জর আসিতে অধিক বিলম্ব নাই। মধ্যে মধ্যে তাহার প্রায়ই জর হইত ; মৃতরাং এ-সব লক্ষণ তাহার বিশেষ জানা ছিল। হরিচরণ আর বসিতে পারিল না, ঘরে যাইয়া শুইয়া পড়িল। ছোটবাবুর যে বিছানা প্রস্তুত হইল না, এ-কথা আর মনে রহিল না। রাত্রে সকলেই আহারাদি করিল, কিন্তু হরিচরণ আসিল না। গৃহিণী দেখিতে আসিলেন। হরিচরণ ঘুমাইয়া আছে ; গায়ে হাত দিয়া দেখিলেন, গা বড় গরম। বুঝিলেন জর হইয়াছে ; স্থতরাং আর বিরক্ত না করিয়া চলিয়া গেলেন। রাত্রি প্রায় দ্বিপ্রহর হইয়াছে। ভোজ শেষ করিয়া দুর্গাদাসবাবু বাড়ি আসিয়া দেখিলেন শয্যা প্রস্তুত হয় নাই। একে ঘুমের ঘোর, তাহাতে আবার সমস্ত পথ কি করিয়া বাড়ি যাইয়া চিত হইয়া শুইয়া পড়িবেন, আর হরিচরণ প্রান্ত পদযুগলকে বিনাম হইতে বিমুক্ত করিয়া অল্প অল্প টিপিয়া দিতে থাকিবে এবং সেই স্থথে অল্প তন্দ্রার ঝেণকে গুড়গুড়ির নল মুখে লইয়া একেবারে প্রভাত হইয়াছে দেখিতে পাইবেন, ইত্যাদি ভাবিতে ভাবিতে আসিতেছিলেন । একেবারে হতাশ হইয়া বিষম জলিয়া উঠিলেন, মহা ক্রুদ্ধ হইয়া দুই-চারিবার হরিচরণ, হরি, হরে—ইত্যাদি রবে চিৎকার করিলেন। কিন্তু কোথায় হরি ? সে জরের প্রকোপে সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িয়া আছে। তখন দুর্গাদাসবাবু ভাবিলেন, বেটা ঘুমাইয়াছে। ঘরে গিয়া দেখিলেন, বেশ মুড়ি দিয়া শুইয়া আছে। আর সহ হইল না। ভয়ানক জোরে হরির চুল ধরিয়া টানিয়া তাহাকে বসাইবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু হরি ঢলিয়া বিছানার উপর পুনৰ্ব্বার শুইয়া পড়িল। তখন বিষম ক্রুদ্ধ হইয়া দুর্গাদাসবাবু হিতাহিত বিশ্বত হইলেন। হরির পিঠে সবুট পদাঘাত করিলেন। সে ভীম প্রহারে চৈতন্ত লাভ করিয়া উঠিয়া বসিল। দুর্গাদাসবাবু বলিলেন, কচি খোকা ঘুমিয়ে পড়েচে, বিছানাটা কি আমি করব ? কথায় কথায় রাগ আরও বাড়িয়া গেল ; হন্তের বেত্র-যষ্টি আবার হরিচরণের পুষ্ঠে বার-দুই-তিন পড়িয়া গেল।