পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ চেয়েও শীগগির গিয়ে পৌছতাম। তাতে অন্ততঃ এই লাভ হ’তো, ওই বৰ্ব্বরটাকে হিংসে করে বেড়ানোর দুর্গতি থেকে রক্ষে পেতাম । সে দুৰ্গতি থেকে আমিই তোমাকে বাচাবো। এ-বাসায় আর ঢুকতে দেবো না। ঢুকতে দেবে না ? কাকে ? আমাকে, না তাকে ? তোমাকে । আমার রংটা কালো মানি, মুখের হাও একটু বড়, কিন্তু তাই বলে কুমীরের মতো ? না না, অত বড় নয়, একটু ছোট। কিন্তু মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছ, অতিশমোক্তি শুনতে যে তোমরা ভালবাস মণি, তাই ত বাড়িয়ে বলি । আর কাউকে শোনাও গে, আমার দরকার নেই। কে বললে নেই ? সবচেয়ে দরকার তোমারই । যে মেয়ের দেহের রূপ আছে, বাপের টাকা আছে, তাকে বাইরে থেকে যাচাই করে নেবার লোকের অভাব হয় না। কিন্তু সম্পদ যার অন্তরে লুকানো, তার আমার মতো একজন অকপট ভক্ত নইলে চলেই না। কিন্তু সে কি ওই জলধি ? বুঝেছি, ওর তোমাকে ভাল লেগেছে। কেন জানো ? ও ভেবেছে, ও যে তোমাকে পছন্দ করে সে ওর নিজেরই মহত্ব । তোমার নিজের গুণে নয়, ওর স্বকীয় ঔদার্য্যে। কিন্তু তুমি পছন্দ করেছ কার গুণে শুনি ? রমেন গম্ভীর হয়ে বললে, নেহাং মিথ্যে বলনি মণি। খুব সম্ভব তাই বটে। ওটা আমার নিজেরই মহত্ব । নইলে তোমাকে হয়ত চিনতেই পারতাম না । কিংবা কি জানো মণি, নদীর স্রোত যেখানটায় ঘূর্ণিপাকে ঘোরে, কুটে-কাটা না বুঝেও সেই দিকে ছোটে। ঘুরে ঘুরে আবর্তে ডুব মারে, তার পরে কোথায় যায় কে জানে। ছিলাম ইউরোপে, ছেলেবেলায় সেইটুকু পরিচয়, কতকাল পরে কি ভেবে হঠাৎ চিঠি লিখে খোজ নিলে, মন আমনি চঞ্চল হয়ে উঠলো। চাকরি ছেড়ে দিলাম, যা কিছু সম্বল ছিল বিক্ৰী করে ভাড়া যোগাড় করে তোমার কাছে ছুটে এসে উপস্থিত হলাম । এর কি নিগূঢ় অর্থ নেই ভাবে ? ঘুর্ণাবৰ্ত্তের উপমাটা একটু চিস্ত করে দেখো। আর রূপের কথা যদি তোলে, একটু চেয়ে দেখলেই টের পাবে তুমি আমার পায়ের কড়ে আঙ্গুলেও লাগো না। ইউরোপের গল্প নিজের মুখে আর করতে চাইনে, কিন্তু তোমাদের এই খাদী-বোচা বেঁটের দেশের কত রূপসী মেয়ের মাথা ঘুরে যায় এমন চেহারা কি আমার নয় ? সত্যি বলে । মণি হেসে ফেলে বললে, কি বিনয় ! প্রভুপাদ গোস্বামীরা পৰ্য্যস্ত হার মানে। আচ্ছা রমেন, তোমার প্রণয় নিবেদনের ভাষাটা কি তুমি মুখস্ত করে রেখেছ? রোজই ঠিক একই রকম বলে কি করে ? কোথাও একটা কমা সেমিকোলন পর্য্যস্ত বাদ পড়ে মা, হুবহু একই কথা প্রত্যহ বলতে তোমার লজ্জা করে না ? \లి తి