পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগামী কাল নিশ্চয় করে । তবে বল কেন ? বলবার হেতু আছে মণি । দেবতাদের প্রসন্ন করার দুটাে ধারা আছে। এক স্তব, আর এক মন্ত্র। স্তব মনের আবেগে যথা-ইচ্ছা বানানো যায়, তার একদিনের বাক্য আর একদিনের সঙ্গে মেলার দরকার নেই। শুনে দেবতা খুশী হয়ে বর দিতেও পারেন, না-ও পারেন। তার অনুগ্রহ, ভক্তর জোর নেই। কিন্তু মন্ত্র তা নয়, ইচ্ছামত বানানো যায় না, মুখস্থ করে আবৃত্তি করতে হয় । উচ্চারণ নিভুল হলে দেবতার না বলবার জো নেই, চুলের ঝুটি ধরে বর আদায় হয়। একেই বলে সিদ্ধমন্ত্র। সাহেবেরা বলে ম্যাজিক। বুনোদের মধ্যে এই মন্ত্রে যারা সিদ্ধি লাভ করেচে, সমাজের ভিতর তাদের প্রতিষ্ঠা ও প্রতাপের অবধি নেই—লোক থর থর করে কাপে । মণি বললে, বুনোদের মন্ত্ৰ তুমিও জানো না, আমিও না। নিশ্চয় তার গভীর অর্থ আছে, কিন্তু তুমি যা আমার কাছে আবৃত্তি করে তার বারো আনার মানে হয় না । রমেন বললে, শুনে আহলাদে তোমার পিঠে চাপড়াতে ইচ্ছে করচে। আশা হচ্চে হাতড়ে হাতড়ে এতদিনে ঠিক জিনিসটিতে হাত লেগেচে, মণি, ও-বস্তু যত অর্থহীন হয় ততই থাটি । একদম অবোধ্য হলে তার আর মার নেই—সেই হ’লো একেবারে সিদ্ধমন্ত্র। তখন দেবতার গলায় গামছা দিয়ে টেনে এনে অভীষ্ট আদায় করা যায় । মণি গম্ভীর হতে গিয়েও হেসে ফেললে। বললে, বুনোদের অনেক দেবতা, তাদের মন্ত্র-সিদ্ধ ওস্তাদদের ভাবনা নেই—যাকে হোক একটা ধরতে পারলেই হ’লো, কিন্তু তুমি কোন দেবতার ফুটি ধরে বর আদায় করবে শুনি ? এখন শুনে কি হবে ? শুধু এইটুকু জেনে রেখো, কুটি খুললে তার চুল পা পৰ্য্যস্ত ছড়িয়ে পড়ে, সেইটি বাগিয়ে যখন ধরবে, তখন দেবতা আপনিই টের পাবেন। কথাটি কবেন না, মুড় স্বড় করে পিছনে পিছনে আসবেন। শুধু বাঙলা মুলুক নয়, হয়ত ইউরোপ পৰ্য্যন্ত । তোমার ভারি আম্পৰ্দ্ধা রমেন । আস্পৰ্ধাই ত। নইলে সব ছেড়ে এত দূরে আসতাম কোন সাহসে ? তোমার ভুল। তুমি জানো দেশের কাজে আমি নিজেকে সাঁপে দিয়েচি। দিলেই বা গো । মন্ত্রের জোর যে তারও উপরে। দেশ-টেশ কোথায় ভেসে যায় । - মণি রাগ করে বললে, দেখে, মন্ত্র মন্ত্র করে চালাকি ক’রে না। অামার VDE}