পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ‘কুমীরের মতো ই, অমাবস্তার মতে রং—আমার আশা তুমি ছাড়ো। সত্যি ভালোবাসলে কেউ অমন বলে না। তা আবার প্রিয়ার মুখের উপর। তার চেয়ে বরঞ্চ তুমি যেখান থেকে এসেচে সেইখানেই ফিরে যাও। ফেরবার জো নেই মণি, ভাড়ার টাকা পাবো কোথায় ? আমি জোগাড় করো দেবো। তা হলে সে-ই ভালো। দু’জনের ভাড়া যোগাড় করে । দু’জনের নয়, একজনের। কিংবা আর একট, কাজ ক’রে রমেন ? নানা দেশের নানা ইউনিভারসিটি থেকে পাশ করার যে লম্বা ফর্দ তোমার নামের পিছনে আছে তাতে বিদেশ ফিরে যাবার দরকার কি ? চেষ্টা করলে এখানেই যে একটা বড় চাকরি পাবে। অনেক সুন্দরী ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার আলাপ আছে, কেউ তাদের সম্বন্ধে এতটুকু কলঙ্কের আভাস পর্য্যন্ত দিতে পারে না, তারা এমনি মেয়ে। চিরদিন সাধ্বী পতিব্ৰতা হয়ে তোমার ঘর আলো করবে আমি লিখে দেবো। এমন কি, জামিন পৰ্য্যন্ত হবো। কথা দিচ্ছি তুমি সত্যিই মুখী হবে রমেন। শুধু একটি প্রার্থনা, যখন তখন এসে এক কথা নিলে আমাকে আর জালা তন ক’রো না । বলতে বলতে তার চোখ-মুখের ভাব গম্ভীর হয়ে এলো, বললে, তা ছাড়া নিজেকেও ত চিনি। আমার মতো একটা দজাল দুর্দান্ত কুশ্রী মেয়ে নিয়ে তোমার হবে কি ? আমি কি কোন অংশেই তোমার যোগ্য ? রমেন উত্তর দিলে, কোনদিন কি বলেচি তুমি আমার ধোগ্য ? নিজেকে কি আমিই চিনিনে ? তোমার ঐ ভাল-ভাল সতী-লক্ষ্মী বান্ধবীদের যথাকালে যথাযোগ্য পাত্রে অর্পণ ক’রে, আমি তিলাৰ্দ্ধ আপত্তি করবে না। কিন্তু জাত-সাপুড়ের কল্যাণ-কামনায় যদি উপদেশ করে তাকে গোখরো কেউটে ছেড়ে হেলে আর টোড়া সাপ নিয়ে খেলাতে, তবে বরঞ্চ পেশা ছেড়ে দেব, কিন্তু আত্মমর্য্যাদা নষ্ট করবো না । মরণ আছে জেনেও । আমি বুঝি গোখরে কেউটে, আর তুমি জাত-সাপুড়ে ? আমি নয় ত কি জলধিটা যে কেবল তোমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করছে আর নানা ছলে পাহারা দিয়ে ফিরছে—সে ? তাই সে ফিক্লক, কিন্তু তুমি আর আমাকে জালাতন করতে পাবে না, তোমাকে বলে দিলাম । ওগো মণি, কাদবে তুমি কাদবে। এখন মস্ত বাহাদুরি হচ্ছে, কিন্তু একদিন বুঝবে জালাতন করবার যার কেউ নেই তার চেয়ে দুর্ভাগা মেয়েও আর জগতে নেই । তোমার চিস্তা নেই রমেন, সম্প্রতি জলধিবাবু আছেন, তিনি একাই যথেষ্ট। যখন তিনিও থাকবেন না তখন তোমাকে চিঠি লিখে জানাবো। \et