পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হইবে না। সংসারে সে লোকটার অসাধ্য কাৰ্য্য নাই। তাহার অনেক কুকৰ্ম্মে বাধা দিয়া পিতা ও কন্যার মধ্যে অনেক গোপন সংগ্রাম হইয়া গেছে, চিরদিন পিতাকেই পরাভব মানিতে হইয়াছে, অথচ, নানা কারণে এতকাল তাহাকে ষোড়শীর মাতার সম্বন্ধে মৌন থাকিতেই হইয়াছে। কিন্তু আজ যখন তারাদাস ক্রোধবশে একবার কথাটা প্রকাশ করিয়া ফেলিয়াছে, তখন আর সে কোনমতেই চুপ করিয়া থাকিবে না। এই কলঙ্কের কালি দুই হাতে ছড়াইয়া নিজের সঙ্গে আর একজনের সৰ্ব্বনাশ করিয়া তবে গ্রাম হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবে । ইহা যে অকিঞ্চিংকর নয়, ইহা যে তাহার সমস্ত ভবিষ্যংটাকে আঁধার করিয়া তুলিবে, তাহাও ষোড়শী দূর হইতে স্পষ্ট দেখিতে লাগিল ; কিন্তু সেই অন্ধকারের অভ্যন্তরে যে কি সঞ্চিত আছে, তাহার কোন আভাসই তাহার চোখে পড়িল না। বেলা বাড়িয়া উঠিতে লাগিল, এইখানে বসিয়া ভিতরের উদ্যোগ-আয়োজনের অস্পষ্ট কোলাহল মাঝে মাঝে তাহার কানে আসিতে লাগিল, এবং তাহারই ফঁাকে ফঁাকে জীবানন্দের মুখের অলকা নাম, তাহার সলজ্জ ক্ষম ভিক্ষ, তাহার ব্যাকুল প্রার্থনা, এমনি কত-কি যেন একটা ভুলে-যাওয়া কবিতার ভাঙা-চোরা চরণের মত রহিয়া রহিয়া তাহার মনের মধ্যে অকারণে আনাগোনা করিতে লাগিল ; অথচ যে সঙ্কট ওই গ্রামখানার মধ্যে তাহারই প্রতীক্ষায় উদ্যত হইয়া আছে, তাহার বিভীষিকা সেই মনের মধ্যেই অমুক্ষণ তেমনি ভীষণ হইয়াই রহিল । ক্রমশঃ, ধীরে ধীরে সূৰ্য্যদেব অপর প্রাস্তে হেলিয়া পড়িলেন, এবং তাহারই একটা দীপ্ত রশ্মি হইতে মুখ ফিরাইতে গিয়া হঠাং বহুদূরে পরপারের মাঠের মধ্যে জমিদারের পালকিখানা তাহার চোখে পড়িল । এই দিকেই যখন তাহারা গিয়াছে, তখন এক সময়ে নিকট দিয়াই গিয়াছে, সে খেয়াল করে নাই, হয়ত চেষ্টা করিলে একটু দেখা যাইতেও পারিত, কিন্তু এখন অজ্ঞাতসারে শুধু কেবল তাহার একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল । অপরাষ্ণু সায়াহে এবং সায়াহ্ন সন্ধ্যায় অবসান হইতে অধিক বিলম্ব হইল না । ষোড়শী গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করিয়া উঠিয়া দাড়াইল, তখনও মানুষ চেনা যায়, কিন্তু মাঠে লোক ছিল না । এবং এই মির্জন পথটা অতিক্রম করিয়া যখন নিজের গৃহের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল তখন অন্ধকার গাঢ়তর হইয়াছে। কাহারও সহিত সাক্ষাৎ না হইলেও তাহার মনের মধ্যে ঝড় বহিতেছিল, কিন্তু সদর দরজায় তালা বন্ধ দেখিয়া সে যেন একটা কঠিন দায় হইতে অব্যাহতি পাইয়া ধাপ ছাড়িয়া বাচিল। মুরিয়া খিড়কির দ্বারে গিয়া দেখিল ভিতর হইতে তাহ আবদ্ধ ; ইহাই সে প্রত্যাশা করিয়াছিল। কিন্তু কবাটট সে বাহির হইতে খুলিবার কৌশল জানিত। অনতিবিলম্বে ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিল &s