পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سر‘‘ মন্দিরের অভ্যস্তরে একপাশে স্থিরভাবে দাড়াইয়া ষোড়শী কহিল, না বোন, আমি পূজো করব না। কেন ? বলিয়া হৈম সবিস্ময়ে চাহিয়া দেখিল, ভৈরবীর মুখ মান, কোনরূপ আনন্দ বা উৎসাহের লেশমাত্র নাই এবং তাহার প্রশ্নের উত্তর সে যেন একটু চিস্ত করিয়াই দিল। কহিল, এর কারণ যদি কখনো বলবার দরকার হয়, সে শুধু তোমাকেই বলব, কিন্তু আজ নয়। তা ছাড়া, আমি নিজেও বড় একটা পূজা করিনে ভাই, যিনি এ কাজ নিত্য করেন, তিনিই করুন, আমি কেবল এইখানেই দাডিয়ে তোমার ছেলেকে আশীৰ্ব্বাদ করি, সে যেন দীর্ঘজীবী হয়, নীরোগ হয়, মানুষ হয়। সন্তানের প্রতি ভৈরবীর এই ঐকান্তিক আশীৰ্ব্বচনেও মায়ের মন হইতে অপ্রসন্নতা ঘুচিল না । সে কুষ্ঠিতম্বরে কহিল, কিন্তু আজকের দিনটা যে একটু অন্যরকমের দিদি ! আপনি নিজের হাতে পূজে না করলে যে ওঁদের কাছে ভারি ছোট হয়ে যাবো! বলিয়া সে একবার উন্মুক্ত-দ্বার দিয়া বাহিরের বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিল। ষোড়শীর নিজের দৃষ্টিও উহাকে অনুসরণ না করিয়া পারিল না। দেখিল সকলে এই দিকেই চাহিয়া আছে। তাহাদের চোখ ও মুখের উপর উংকট কলহের চিহ্ন একান্ত চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে—ঠিক যেন অধীর সৈনিকের দল কেবলমাত্র তাহাদের অধিপতির ইঙ্গিতের অপেক্ষায় বহু দুঃখে তাহাদের যুদ্ধ-বেগ সংযত করিয়া আছে ; কিন্তু রায় মহাশয় সে ইঙ্গিত দিলেন না। তিনি ঘোর সংসারী লোক, মুহূৰ্ত্তেই বুঝিলেন উপস্থিত ক্ষেত্রে তিনি প্রকাতে ধনী কন্যা-জামাতার বিরুদ্ধাচরণ করিতে পারেন না। অল্পকালেই তাহার রক্তচক্ষু অবনত হইয়া আসিল, এবং কাহাকেও আর একটি কথাও না কহিয়া তিনি গাত্ৰোখান করিয়া ধীরে ধীরে মন্দিরপ্রাঙ্গণ তাগ করিয়া গেলেন। দুই-চারিজন অনুগত ব্যক্তি ভিন্ন কেহই তাহার সঙ্গ লইল না । বৃদ্ধ শিরোমণি মহাশয় রহিয়া গেলেন, এবং অনেকেই ব্যাপারটা শেষ পৰ্য্যস্ত কি গড়ায় জানিবার জন্য অপেক্ষা করিয়া রহিল । হৈম মিনতি করিয়া কহিল, মা ভৈরবীর আশীৰ্ব্বাদ আমরা মাতা-পুত্রে মাথায় ক’রে নিলাম, কিন্তু সে আশীৰ্ব্বাদ আমি আপনাকে দিয়েই পাক ক’রে নিতে চাই দিদি। বেশ, আমি অপেক্ষা করতে পারব ; পূজো আজ বন্ধ থাক—যেদিন আপনি আদেশ করবেন, এই উদ্যোগ-আয়োজন আবার না হয় সেইদিনই হবে। $ 8