পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভৈরবী চারিদিকে একবার চাহিয়া লইয়া মুদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, ইনি কোথায় ? বসুসাহেব কহিলেন, আমারও জিজ্ঞাস্ত তাই। হয়ত কাছাকাছি কোথাও গেছেন মনে করে আমিও প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে আছি। ভৈরবী মাথা নাড়িয়া আস্তে আস্তে বলিল, তিনি সন্ধার সময় কোথাও থাকেন না, বোধ হয় এখুনি এসে পড়বেন । বসুসাহেব কহিলেন, এখানে থাকলে তাই তার নিয়ম বটে, আমিও শুনে এসেচি । কিন্তু সন্ধ্যা ত হ’লো। আকাশের গতিকও তেমন ভাল নয়, বলিয়া তিনি সম্মুখে মাঠের প্রান্তে দৃষ্টিপাত করিলেন। ষোড়শী তাহার দৃষ্টি অনুসরণ করিয়া সেইদিকে চাহিয়া নীরব হইল । পশ্চিমদিগন্তে তথন কালো কালো খণ্ড মেঘ ধীরে ধীরে জমা হইয়া উঠিতেছিল। এই নিস্তব্ধ জনহীন প্রাস্তরে ছায়াচ্ছন্ন বৃক্ষতলের ঘনায়মান অন্ধকারে দাড়াইয়া উভয়ের কেহই কিছুক্ষণের জন্য কথা খুজিয়া পাইলেন না, অথচ এই বিসদৃশ অবস্থায় দুজনেই কেমন যেন সঙ্কুচিত হইয়া উঠিলেন। এবং বোধ হয় এই মৌনতার সঙ্কট হইতে অব্যাহতিলাভের জন্যই যেন বসুসাহেব হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, কাল আমি চলে যাচ্চি, শীঘ্র আর অস! হৰে কি না জানিনে, কিন্তু ফকিরের সঙ্গে আর একবার দেখা না করে যেতে হুৈম আমাকে কিছুতেই দিলে না তাই—কিন্তু তিনি ত কোথাও চলে যাননি ? এই বলিয়া তিনি দু-এক পদ অগ্রসর হইয়া গেলেন, এবং অনতিদূরবর্তী কুটারের সম্মুখে আসিয়া গলা বাড়াইয়া ক্ষণকাল ঘরের মধ্যে নিরীক্ষণ করি, কহিলেন ভাল দেখা যায় না, কিন্তু কোথাও কিছু আছে বলেও মনে হয়না । মুসলমান ফকিরেরা ধুনি জালে কি-না জানিনে, কিন্তু এইরকম কি একটা জল দিয়ে কে যেন নিবিয়ে দিয়ে গেছে বলে মনে হচ্চে। আপনি দেখুন দেখি, আমি আর ভিতরে যাবো না । তা হলে নিরর্থক অপেক্ষা করে কোন লাভ নেই। বলিয়া তিনি ষোড়শীর প্রতি চাহিয়া ফিরিয়া আসিলেন । কথাটা শুনিয়াই যোড়শীর বুকের মধ্যে ধড়াস্ করিয়া উঠিল, এবং তাহার থাকা না-থাকার পরীক্ষা না করিয়াই তাহার নিশ্চয় মনে হইল সংসারে তাহার একমাত্র শুভাকাজী আজ নিঃশব্দে চলিয়া গেছেন, এবং এই নীরব প্রস্থানের হেতু জগতে সে ছাড়া আর কেহ জানে না। ষোড়শী যন্ত্রচালিতের ন্যায় সন্ন্যাসীর কুটীরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া মাঝখানে স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। কোথাও যে কিছু নাই, এই ছোট ঘরখানি আজ যে একেবারে একান্ত শূন্য সে তাহার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়িয়াছিল, কিন্তু তবুও সে তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া আসিতে পারিল না। তাহার বুকের মধ্যে কেবল এই কথাটাই অঙ্গারের ন্যায় জলিতে লাগিল, তিনি যথার্থ-ই দোষীজ্ঞানে তাহাকে ত্যাগ করিয়া গেছেন, এবং তাহার আভাস মাত্র দিবারও প্রয়োজন বোধ করেন নাই। সেইখানে পাষাণ-মূৰ্ত্তির স্কার নিশ্চল