পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কহিলেন, দেখুন, পথ-ঘাট আমি কিছুই চিনিনে, তা ছাড়া শুনেচি এ অঞ্চলে সাপ-থোপের ভয়টাও খুব বেশী। এই ভয়ানক অন্ধকারে কি— ষোড়শী থামিল না, চলিতে চলিতে কহিল, পথ আমি চিনি । আপনি আমার ঠিক পিছনে পিছনে আসুন । বস্থসাহেব হাসিলেন, কহিলেন, অর্থাৎ সর্পাঘাতের দুর্ঘটনা ঘটে ত আপনার উপর দিয়েই যাক। তা বটে ! আপনি সন্ন্যাসিনী, এ প্রস্তাব আপনি করতেও পারেন, কিন্তু আমার মুস্কিল এই যে, আমিও পুরুষমামুব । অবশু এ-কথা আপনি কাউকে বলবেন না জানি, এমন কি হৈমকেও না, কিন্তু তবুও ওটা ঠিক পেরে উঠব না । এবার ষোড়শী থমকিয়া দাড়াইল । অন্ধকারে দেখা গেল না বটে, কিন্তু সাহেবের কথা শুনিয়া তাহারও মূপে হাসি ফুটিল । মুহূৰ্ত্তকাল মৌন থাকিয়া কহিল, আপনি তাহলে কি রকম করতে বলেন ? সাহেব কহিলেন, বলা শক্ত। কিন্তু পরামর্শ স্থির হবার পূর্বেই ভিজে উঠতে হবে । বটপত্রে আর বৃষ্টি মানচে না । কথাটা সত্য। কারণ ; উপরের জলধারা ফোটায় ফোটায় নীচে নামিতে সুরু করিয়াছিল । ষোড়শী কহিল, আপনি বরঞ্চ ওই ঘরটার মধ্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, আমি হৈমকে খবর দিয়ে আলো এবং লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিই গে ! আমার অভ্যাস আছে, এ জলে বিশেষ ক্ষতি হবে না । সাহেব কহিলেন, অত্যন্ত মনোরম প্রস্তাব । কারণ, বাঙালী সাহেব হয়ে উঠলে যা হন সে আপনি বেশ জানেন দেগচি। কিন্তু আমার সম্বন্ধে আজও একটুখানি ক্রটি রয়ে গেছে। হৈম মাঝে থাকায় আমার ভেতরের সঙ্গে বাইরের এখনও সম্পূর্ণ একাকার হয়ে উঠতে পায়নি। এ প্রস্তাবও অচল, স্বতরাং চলাই স্থির। চলুন। বৃক্ষতল ছাড়িয়া বাহিরে আসিয়া দুইজনেই বুঝিলেন অগ্রসর হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ, বায়ুবেগে বৃষ্টধারাই যে কেবল গায়ে স্থচের মত বিধিতেছে তাই নয়, ইতিপূৰ্ব্বে যে শুষ্ক বালুকারাশি আকাশ ব্যাপ্ত করিয়া শূন্যে উড়িয়াছে জলধারায় ইয়া মাটিতে না পড়া পৰ্য্যস্ত চোখ চাহিয়া পথ চলা দুঃসাধ্য। নিঃশব্দে চলিতে চলিতে ষোড়শী হঠাৎ পিছনে শব্দ শুনিয়া থমকিয়া দাড়াইয়া কহিল, আপনার লাগল না কি ? বস্থসাহেব কোনমতে সামলাইয়া লইয়া সোজা হইয়া, কহিলেন, হা কিন্তু প্রত্যাশার অতিরিক্ত কিছু নয়। চশমা-শুদ্ধ চোখ আমার চারটে বটে, কিন্তু দৃষ্টিশক্তিটা চার ভাগের এক ভাগ থাকলেও বঁচিতাম। চলুন। ♥ፃ