পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা ষোড়শী চলিল না, একমুহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি ভাল দেখতে পাচ্চেন না ? বস্থ কহিলেন, সত্যি। তারপর ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, বিস্তর ইংরাজী বই মুখস্থ করে সাহেব হতে হয়েচে-তার দক্ষিণাটাও তারা বেশ বড় করেই নিয়েচে । কিন্তু তাই বলে আর দাড়িয়ে ভেজাবেন না—এগোন, দু’চক্ষু বুজে চললে যতটা দেখতে পাওয়া যায়, আমি ততটা দেখতে পাবই, এ আমি আপনাকে নিশ্চয় ভরসা দিচ্চি । ষোড়শীর কণ্ঠস্বর করুণায় কোমল হইয়া উঠিল, কহিল, তা হলে নদীটী পার হতে আপনার ত ভারি কষ্ট হবে । বস্তু বলিলেন, তা ঠিক জানিনে। তবে নদা পার হবার পূৰ্ব্বেও বিশেষ আরাম পাচ্চিনে । কিন্তু তাই বলে এই মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকলেও সমস্তার মীমাংসা হবে না । ষোড়শী এক পা অগ্রসর হইয়া আসিয়া কহিল, আপনি আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে আসুন, এই বলিয়া সে তাহার হাতখানি বাড়াইয়া দিল । এই অপরাচিত নারীর আচরণ ও সাহস দেখিয়া বাকৃপটু ব্যারিস্টার ক্ষণকালের জন্য বিস্ময়ে নিৰ্ব্বাক হইয়৷ গেলেন । কিন্তু সে ওই ক্ষণকালমাত্রই । তারপর সে প্রসারিত হাতখানি নি:শব্দ ব্যগ্রতায় আশ্রয় করিয়া আস্তে আস্তে কহিলেন, চলুন। এইবার আমি সত্যি সত্যিই দু’চক্ষু বুজে চলতে পারব। ষোড়শী ইহার কোন উত্তর দিল না। উভয়ে ধীরে ধারে কিছুদূর অগ্রসর হইলে বসুসাহেব অকস্মাৎ বলিয়া উঠিলেন, আপনার প্রতি আমি সেদিন ভদ্র ব্যবহার করিনি। তার জন্য ক্ষমা চাইচি, আপনি আমাকে মাপ করবেন । ষোড়শী এ-কথার উত্তরেও কিছুই বলিল না, তেমনি নিঃশব্দে ধীরে ধীরে চলিতে লাগিল । বসু কহিলেন, আপনি হৈমর ছেলেবেলার বন্ধু । আমার সেদিনের আচরণ ষাই হোক, আমাকেও ঠিক শত্রু বলেই মনে রাখবেন না । বলিয়া তাহার হাতের উপর একটুখানি চাপ দিলেন । ষোড়শী একেবারেই নিৰ্ব্বাক্ । বসুসাহেব নিজেও কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া পুনশ্চ কহিলেন, এরা যে আপনাকে সহজে ছাড়বেন তা মনে হয় না। খুব সম্ভব মামলা-মকদ্দমাও হবে। ফকিরসাহেব হয়ত সত্যিই চলে গেছেন, আমিও বোধ হয় থাকব না— ষোড়শী কিছুই বলিল না। তিনি নিজেও একটু মৌন থাকিয়া পুনশ্চ কহিলেন, আপনি নিজে আর দেবীর পূজো করবেন না বলেচেন, এ কি রাগ করে ? ষোড়শী এবার জবাব দিল, কহিল, না । 警》