পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনী ষোড়শী এতক্ষণে কথা কহিল, বলিল, কোন গরজ নাই । তা হলে ? ষোড়শী কহিল, আপনি কোন আশঙ্কা করবেন মা ; নিরুপায় দুৰ্ব্বল নারীর ভাগ্যে চিরদিন যা হয়ে আসচে এ-ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম হবে না । কথার খোচাটা বসুসাহেবের বিধিল, কিন্তু তিনি প্রতিবাদও করিলেন না, প্রতিঘাতও করিলেন না। তারপর উভয়েই নিঃশব্দে চলিতে লাগিলেন । ঝড় এবং জল কোনটাই থামে নাই বটে, কিন্তু গ্রামের মধ্যে ঢুকিয় তাহার প্রকোপ মন্দীভূত হইল, এবং পথের বাকটা ঘুরিতেই অদূরে সনাতন মাইতির কুটরের আলোক দু’জনেরই চোখে পড়িল। আরও কিছুদূর অগ্রসর হইয়া ষোড়শী থমকিয়া দাড়াইয়া কহিল, তেমন অন্ধকার আর নেই, আপনি এই পথ ধরে সোজা গেলেই রায়মশায়ের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌছবেন। আর আপনি ? আমার পথ এই বা দিকের বাগানের ভেতর দিয়ে । বসু ছাত ছাড়িলেন না, কহিলেন, পরের মুখে শুনেচি আপনি অতিশয় শিক্ষিতা, আমি নিজে কতটুকু জেনেচি সে উল্লেখ নিম্প্রয়োজন । কিন্তু এর বেশী জানবার অবকাশ আর যদি কখনো ভাগ্যে নাও ঘটে, আজকের এই অভিযানের স্মৃতিটা আমার চিরদিন বড় শ্রদ্ধার সঙ্গেই মনে থাকবে । ষোড়শী মৃদু হাসিয়া কহিল, কিন্তু, কেবলমাত্র এইটুকুই যদি কেউ বাইরে থেকে দে থে থাকে, তার সঙ্গে আপনার মতের মিল হবে না । সাহেব মনে মনে চমকিয়া গেলেন । তারপরে সেই ধরা হাওটির উপর আর একটুখানি চাপ দিয়া ছাড়িয়া দিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন, ন, বানিয়ে বলা গল্পের মত শোনাবে। তাই একে ঘুলিয়ে নোঙর করে মা তুলে বরঞ্চ চুপ করে থাকাই ভাল। এই না ? ষোড়শী ইহার জবাব না দিয়া কহিল, আমার জন্যে অপেক্ষা করে অনেক ভিজেছেন, অনেক দুঃখ পেয়েচেন—আর না। আমিও চললাম । বসু কহিলেন, এই কথাটাই হয়ত আমাকে অনেকদিন ধরে ভাবতে হবে । কাল আমরা যাচ্চি—হৈমকে কি কিছু বলে পাঠাবেন না ? ষোড়শী একমুহূৰ্ত্ত ভাবিয়া কহিল, না। কেবল তার ছেলেকে আশীৰ্ব্বা করচি, যদি ইচ্ছে হয় এইটুকু জানাবেন । এই বলিয়াই সে আর কোন প্রশ্নোত্তরের অপেক্ষ না করিয়া অন্ধকার বন-পথ ধরিয়া নিমেষে অদৃপ্ত হইয়া গেল। সাহেব সেইখানে বিমূঢ়ের মত কিছুক্ষণ স্তন্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । একটা নমস্কার পর্য্যন্ত করা হইল না—ষে ফকিরের জন্য এই, তাহার উদ্দেশ্যে একটা భ్సీ