পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওন। থাকৃ তোমার চামড়ার মামলা, একটা তার করে দাও, আজ তোমার কিছুতেই যাওয়া হবে না । বেশ ত, চল না হয় ছুজনে একবার দেখা করেই আসি ? সে সময় ত আছে । হৈম মুখ তুলিয়া একটু হাসিয়া বলিল, না, সে তোমার সেখানে হয়, কিন্তু এখানে হয় না। আর এত লোকের সামনে বাবাই বা কি মনে করবেন ? রাত্রে আমরা লুকিয়ে যাবে। নিৰ্ম্মলের যথার্থই অত্যস্ত জরুরি মকদ্দমা ছিল, তা ছাড়া কোন ছুতায় যে যাওয়া এমন হঠাৎ স্থগিত করা যাইতে পারে, সে ভাবিয়া পাইল না, বিশেষত: শ্বশুরের সঙ্গে ইহাতে নিদারুণ বিচ্ছেদ ঘটিবার সম্ভাবনা । চিন্তা করিয়া সে কহিল, সে হয় না হৈম, যেতে আমাদের আজ হবেই। আর মনে হয় আমরা মাঝে পড়ে বিপদটা হয়ত তার বাড়িয়ে তুলব। আমার কথা শোন, চল, অযাচিত মধ্যস্থতায় কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি হয়। হৈম স্বামীর মুখের প্রতি চোখ তুলিয়া কিছুক্ষণ স্থির হইয়া বসিয়া থাকিয়া বলিল, আমাকে ত তুমি জানে, আজ আমি কিছুতেই যেতে পারব না। আর কালকের অপরাধে যদি আমাকে তুমি শাস্তি দিতেই চাও, ত ফেলে রেখে যাও। আমি আর তোমাকে আটকাবো না । নিৰ্ম্মল আর কিছু না বলিয়া বাহিরে চলিয়া গেল। শরীর ভাল নয়, আজ যাওয়া হইল না শুনিয়া শাশুড়ীঠাকুরাণী আশ্চৰ্য্য হইলেন, উদ্বিগ্ন হইলেন এবং ততোধিক খুশী হইয়া উঠিলেন, কিন্তু বাহিরের ঘরে বসিয়া শ্বশুরমহাশয় শুধু একটা ই বলিয়াই তামাক টানিতে লাগিবেন। তিনি আশ্চৰ্য্যও হইলেন না, উদ্বিগ্নও হইলেন না, এবং যাহার কিছুমাত্ৰ কাণ্ডজ্ঞান আছে, সে র্তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া খুশীর কথা মুখে আনিলে না । মকদ্দমার ব্যবস্থা করিতে নিৰ্ম্মল তার করিয়া দিল এবং কাজটা যে কেবল নিরর্থক নয় মন্দ, তাহাও সে মনে মনে বুঝিল, তবুও সেই মনটাই তাহার সারাদিন একান্ত সংগোপনে সেই দিনাস্তের জন্যই উন্মুখ হইয়া রহিল। বিগত রাত্রির হৈমর কারাটা যে কত হাস্তাস্পদ, কত অসম্ভব অপেক্ষাও অসম্ভব, সমস্তদিন ধরিয়া এ-কথা তাহার বহুবার মনে হইয়াছে, তবুও সেই একফোটা জল ষেন কোনমতেই আর শুকাইতে চাহিল না এবং প্রতি মুহূর্বেই সে এমনই একটা অজ্ঞাত ও অচিন্তাপূৰ্ব্ব রহস্তের স্বাক্ট করিয়া চলিল, যাহা একই কালে মাধুর্ঘ্য ও তিক্ততায় মিশিয়া একাত্ম হুইয়া উঠিতে লাগিল । לר