পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করেচিস্, জমিদারের পিয়াদার। আমাকে সেদিন বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ? সাগর অনুতপ্ত-স্বরে কহিল, কি করবে মা তুমি যে একলা মেয়েমানুষ । এ পাড়ায় মানুষ বলতেও কেউ নেই, আমরা খুড়ো-ভাইপোও সেদিন হাটে গিয়ে তখনও ফিরতে পারিনি। নইলে সাধ্য কি মা, তোমার গায়ে কেউ হাত দেয়। ষোড়শী মনে মনে বুঝিল এ আলোচনাও ঠিক হইতেছে না, কথায় কথায় হয়ত কি একটা শুনিতে হইবে ; কিন্তু থামিতেও পারিল না, কহিল, তাদের কত লোকজন, তোরা দুটিতে থাকলেই কি আটকাতে পারতিস ? বাহির হইতে সাগর মুখে অফুট ধ্বনি কবিয়া বলিল, কি হবে মা আর মনের দুঃখ বাড়িয়ে । হুজুরও এযেচেন, আমরাও জানি সব মায়ের কৃপায় আবার যদি কখনো দিন আসে, তখন তার জবাব দেব। তুমি মনে ক’রে না মা, হরপ্পুড়ো বুড়ো হয়েছে বলে মরে গেছে । তাকে জানতো মাতু ভৈরবী, তাকে জানে শিরোমনিঠাকুর । জমিদারের পাইক-পিয়াদা বহুত আছে তাও জানি, গরীব বলে আমাদের দুঃখও তারা কম দেয়নি, সেও মনে আছে—ছোটলোক আমরা নিজেদের জন্যে ভাবিনে, কিন্তু তোমার হুকুম হলে মা ভৈরবীর গায়ে হাত দেবার শোধ দিতে পারি। গলায় দড়ি বেঁধে টেনে এনে ওই হুজুরকেই রাতারাতি মায়ের স্থানে বলি দিতে পারি মা, কোন শালা আটকাবে না । ষোড়শী মনে মনে শিহরিয়া কহিল, বলিস্ কি সাগর, তোরা এমন নিষ্ঠুর, এমন ভয়ঙ্কর হতে পারিস ? এইটুকুর জন্যে একটা মানুষ খুন করবার ইচ্ছে হয় তোদের ? সাগর কহিল, এইটুকু ! কেবল এইটুকুর জন্যেই কি আজ তোমার এই দশা! জমিদার এয়েচেন শুনে খুড়ো যেন জলতে লাগল। তুমি ভেবো না মা, আবার যদি কিছু একটা হয়, তখন সেও কেবল এইটুকুতেই থেমে থাকবে । ষোড়শী কহিল, হারে সাগর তুই কখনো গুরুমশায়ের পাঠশালে পড়েছিলি ? বাহিরে বসিয়া সাগর যেন লজ্জিত হইয়া উঠিল, বলিল, তোমার আশীৰ্ব্বাদে অমনি একটু রামায়ণ-মহাভারত নাড়তে-চাড়তে পারি। কিন্তু এ-কথা কেন জিজ্ঞেসা করলে মা ? ষোড়শী বলিল, তোর কথা শুনলে মনে হয় খুড়ো তোর না বুঝতেও পারে, কিন্তু তুই বুঝতে পারবি। সেদিন আমাকে কেউ ধবে নিয়ে যায়নি সাগর, কেউ আমার গায়ে হাত দেয়নি, আমি কেবল রাগের মাথায় আপনি চলে গিয়েছিলাম । সাগর কহিল, সে আমরাও শুনেছি, কিন্তু সারারাত ষে ঘরে ফিরতে পারলে না ম, সেও কি রাগ করে ? ষোড়শী এ প্রশ্নের ঠিক উত্তরটা এড়াইয়া গিয়া কহিল, কিন্তু যে জন্যে তোদের կՀ