পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ষোড়শী কহিল, কিন্তু তোরা ত আমার প্রজা নয়, মা-চণ্ডীর প্রজা । আমার মত মায়ের দাসী কত হয়ে গেছে, কত হবে ; তার জন্যে তোরা কেনই বা ঘর-দোর ছেড়ে যাবি, কেনই বা উপদ্রব-অশাস্তি ঘটাবি। এমন ত হতে পারে, আমার নিজেরই আর এ-সমস্ত ভাল লাগচে না । সাগর সবিস্ময়ে কহিল, ভাল লাগচে না ? ষোড়শী বলিল, আশ্চৰ্য্য কি সাগর ? মানুষের মন কি বদলায় না ? এবার প্রত্যুত্তরে লোকটি কেবল একটা ই বলিয়াই খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, কিন্তু রাত আর বেশি বাকী নেই মা, আকাশে মেঘও কেটে যাচ্ছে, এইবার তুমি একটু ঘুমোও । ষোড়শীর নিজেরও এ-সকল আলোচনা ভাল লাগিতেছিল না, তাহাতে সে অত্যন্ত শ্রাস্ত হইয়াছিল । সাগরের কথায় আর দ্বিরুক্তিমাত্র না করিয়া চোখ বুজিয়া গুইয়া পড়িল। কিন্তু সে-চক্ষে ঘুম যতক্ষণ না আসিল, কেবল ঘুরিয়া-ফিরিয়া উহারই কথাগুলো তাহার মনে হইতে লাগিল, এই যে লোকটি বিনিদ্র চক্ষে বাহিরে বসিয়া রহিল, তাহাকে সে ছেলেবেলা হইতেই দেখিয়া আসিয়াছে ; ইতর ও অস্ত্যজ বলিয়া এতদিন শুধু তুচ্ছ ও ছোট কাজেই লাগিয়াছে, কোনদিন কোন সম্মানের স্থান পায় নাই, আলাপ করিবার কল্পনা ত কাহারও স্বপ্নেও উঠে নাই, কিন্তু আজ এই দুঃখের রাত্রে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে মুখ দিয়া তাহার অনেক কথাই বাহির হইয়া গেছে, এবং তাহার ভালমন্দ হিসাব করিবার দিন হয়ত একদিন আসিতেও পারে ; কিন্তু শ্রোতা হিসাবে এই ছোটলোকটিকে সে একান্ত ছোট বলিয়া আজ কিছুতেই ভাবিতে পারিল না । পরদিন সকালে ঘুম ভাঙিলে দ্বার খুলিয়া বাহির হইয়া দেখিল সকাল আর নাই—ঢের বেলা হইয়াছে ; এবং অনতিদূরে অনেকগুলা লোক মিলিয়া তাহারই রুদ্ধ দরজার প্রতি চাহিয়া কি যেন একটা তামাসার প্রতীক্ষা করিয়া দাড়াইয়া আছে। কোথাও এতটুকু পর্দা, এতটুকু আব্রু নাই । সহসা মনে হইল, তৎক্ষণাৎ দ্বার বন্ধ না করিয়া দিলে এই লোকগুলার উৎসুক দৃষ্টি হইতে বুঝি সে বাচিবে না। এই ক্ষুদ্র গৃহটুকু যত জীর্ণ যত ভগ্নই হোক, আত্মরক্ষা করিবার এ-ছাড়া আর বুঝি সংসারে দ্বিতীয় স্থান নাই, এবং ঠিক সেই মুহুর্ভেই দেখিতে পাইল ভিড় ঠেলিয়া এককড়ি নন্দী তাহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । সবিনয়ে কহিল, গ্রামে হুজুর পদার্পণ করচেন, শুনেচেন বোধ হয় । জমিদারের গোমস্ত৷ এই এককড়ি ইতিপূৰ্ব্বে কোনদিন তাহাকে আপনি বলিয়া সম্বোধন করে নাই। তাহার বিনয়, তাহার এই সম্ভাষণের পরিবর্তন ষোড়শীকে 御制