পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐীকান্ত সাবধানে স্তব্ধ হইয়া সেই অটল শাস্তি রক্ষা করিতেছে। হঠাৎ চোখের উপরে যেন সৌন্দর্য্যের তরঙ্গ খেলিয়া গেল। মনে হইল, কোন মিথ্যাবাদী প্রচার করিয়াছে— আলোরই রূপ, আঁধারের রূপ নাই ? এতবড় ফাকি মানুষে কেমন করিয়া নীরবে মানিয়া লইয়াছে! এই যে আকাশ-বাতাস স্বৰ্গ-মর্ত্য পরিব্যাপ্ত করিয়া দৃষ্টির অন্তরে-বাহিরে আঁধারের প্লাবন বহিয়া যাইতেছে, মরি ! মরি! এমন অপরূপ রূপের প্রস্রবণ আর কবে দেখিয়াছি ! এ ব্ৰহ্মাণ্ডে যাহা যত গভীর, যত অচিন্ত, যত সীমাহীন— তাহা ত ততই অন্ধকার । অগাধ বারিধি মসীকৃষ্ণ ; অগম্য গহন অরণ্যানী ভীষণ আঁধার , সৰ্ব্বলোকাশয়, আলোর আলো, গতির গতি, জীবনের জীবন, সকল সৌন্দর্ঘ্যের প্রাণপুরুষও মানুষের চোখে নিবিড় অ"ধার! কিন্তু সে কি রূপের অভাব ? যাহাকে বুঝি না, জানি না, যাহার অন্তরে প্রবেশের পথ দেখি না—তাহাঁই তত অন্ধকার! মৃত্যু তাই মানুষের চোখে এত কালো, তাই তার পরলোকের পথ এমন দুস্তর আঁধারে মগ্ন । তাই রাধার দু-চক্ষু ভরিয়া যে-রূপ প্রেমের বন্যায় জগৎ ভাসাইয়া দিল, তাহাও ঘনশ্যাম । কখনও এ সকল কথা ভাবি নাই, কোন দিন এ পথে চলি নাই ; তবুও কেমন করিয়া জানি না, এই ভয়াকীর্ণ মহাশ্মশান-প্রান্তে বসিয়া নিজের এই নিরুপায় নিঃসঙ্গ একাকিত্বকে অতিক্রম করিয়া আজ হৃদয় ভরিয়া একটা অকারণ রূপের আনন্দ থেলিয়া বেড়াইতে লাগিল, এবং অত্যন্ত অকস্মাৎ মনে হইল, কালোর যে এত রূপ ছিল, সে ত কোন দিন জানি নাই। তবে হয়ত মৃত্যুও কালো বলিয়া কুৎসিত নয় ; একদিন যখন দে আমাকে দেখা দিতে আসিলে, তখন হয়ত তার এমনি অফুরন্ত, মুন্দর রূপে আমার দু-চক্ষু জুড়াইয়া যাইবে । আর সে দেখার দিন যদি আজই আসিয়া থাকে, তবে, হে আমার কালো ! হে আমার অভ্যগ্র পদধ্বনি ! হে আমার সৰ্ব্বদুখ-ভয়-ব্যথাহারী অনন্ত স্বন্দর ! তুমি তোমার অনাদি আঁধারে সর্বাঙ্গ ভরিয়া আমার এই দুটি চোখের দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ হও, আমি তোমার এই অন্ধতমসাবৃত নির্জন মৃত্যুমন্দিরের দ্বারে তোমাকে নিৰ্ভয়ে বরণ করিয়া মহানন্দে তোমার অনুসরণ করি । সহসা মনে হইল, তাই ত ! তাহার ওই নিৰ্ব্বাক আহবান উপেক্ষা করিয়া অত্যন্ত হীন অস্তেবাসীর মত এই বাহিরে বসিয়া আছি কি জন্তে ? একেবারে ভিতরে, মাঝখানে গিয়া বসি না কেন । নামিয়া গিয়া ঠিক মধ্যস্থলে একেবারে চাপিয়া বসিয়া পড়িলাম। কতক্ষণ যে এখানে এইভাবে স্থির হইয়া ছিলাম, তখন ছশ ছিল না। ছশ হইলে দেখিলাম, তেমন অন্ধকার আর নাই—আকাশের একপ্রাস্ত যেন স্বচ্ছ হুইয়া গিয়াছে ; এবং 33