পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বড়দিদি

প্রতিকূল। তিনি পিতা-পুত্রের মাঝখানে ঝড়ের মত আসিয়া পড়িয়া এমনি অট্টহাসি হাসিলেন যে, দুইজনেই স্তম্ভিত হইয়া গেল!

 গৃহিণী কহিলেন, তবে আমাকেও বিলাত পাঠাইয়া দাও–না হইলে সুরোকে সামলাইবে কে? যে জানে না, কখন কি খাইতে হয়, কখন কি পরিতে হয়, তাকে একলা বিলাত পাঠাইতেছ? বাড়ির ঘোড়াটাকে সেখানে পাঠান যা ওকে পাঠানও তাই। ঘোড়া-গরুতে বুঝিতে পারে যে, তাহার ক্ষুধা পাইয়াছে, কি ঘুম পাইয়াছে — তোমার সুরো তাও পারে না। তারপর আবার হাসি।

 হাস্যের আধিক্য-দর্শনে রায়মহাশয় বিষম লজ্জিত হইয়া পড়িলেন। সুরেন্দ্রনাথও মনে করিল যে, এরূপ অকাট্য যুত্তির বিপক্ষে কোনরূপ প্রতিবাদ করা যায় না। বিলাত যাইবার আশা সে ত্যাগ করিল। তাহার বন্ধু এ কথা শুনিয়া বিশেষ দুঃখিত হইল। কিন্তু বিলাত যাইবার আর কোন উপায় আছে কি না, তাহাও সে বলিয়া দিতে পারিল না। কিন্তু অবশেষে কহিল যে, এরূপ পরাধীনভাবে থাকার চেয়ে ভিক্ষা করিয়া খাওয়া শ্রেয়; এবং ইহাও নিশ্চয় যে, এরূপ সম্মানের সহিত যে এম. এ. পাশ করিতে পারে–উদরান্নের জন্য তাহাকে লালায়িত হইতে হয় না।

 সুরেন্দ্র বাটী আসিয়া এ কথা ভাবিতে বসিল। যত ভাবিল তত সে দেখিতে পাইল যে, বন্ধু ঠিক বলিয়াছে—ভিক্ষা করিয়া খাওয়া ভাল। সবাই কিন্তু বিলাত যাইতে পারে না, কিন্তু এমন জীবিত ও মৃতের মাঝামাঝি হইয়াও সকলকে দিন কাটাইতে হয় না।

 একদিন গভীর রাত্রে সে স্টেশনে আসিয়া কলিকাতার টিকিট কিনিয়া গাড়িতে বসিল এবং ডাকযোগে পিতাকে পত্র লিখিয়া দিল যে, কিছুদিনের জন্য সে বাড়ি পরিত্যাগ করিতেছে, অনর্থক অনুসন্ধান করিয়া বিশেষ লাভ হইবে না এবং সন্ধান পাইলেও যে সে বাটীতে ফিরিয়া আসিবে, এরূপ সম্ভাবনাও নাই।

 রায়মহাশয় গৃহিণীকে এ পত্র দেখাইলেন। তিনি বলিলেন, সুরো এখন মানুষ হইয়াছে—বিদ্যা শিখিয়াছে—পাখা বাহির হইয়াছে–এখন উড়িয়া পলাইবে না ত কখন পলাইবে!

 তথাপি তিনি অনুসন্ধান করিলেন—কলিকাতায় যাহারা পরিচিত ছিল, তাহাদিগকে পত্র দিলেন; কিন্তু কোন উপায় হইল না। সুরেন্দ্রের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।

১৩৩