পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নাই, তখন আর কেন ? কাহার জন্য পরের হিংসা করিব ! কাহার জন্য আর পরের চোখে জল বহাইব! আর এ সকল হীন প্রবৃত্তি তাহার কোন কালেই ছিল না, বড়লোকের মেয়ে—কোন সাধ, কোন আকাঙ্ক্ষাই তাহার অতৃপ্ত ছিল না—হিংসা-দ্বেষ কোনদিন শিখেও নাই । তাহার নিজের হৃদয়ে অনেক ফুল ফোটে, আগে সে-ফুলে মালা গাথিয়া সে স্বামীর গলায় পরাইয়া দিত। এখন স্বামী নাই, তাই বলিয়া ফুলগাছটি সে কাটিয়া ফেলে নাই। এখনো তাহাতে তেমনি ফুল ফোটে, ভূমে লুটাইয়া পড়ে ! এখন সে আর মালা গাথিতে যায় না সত্য, গুচ্ছ করিয়া অঞ্জলি ভরিয়া দীন দুঃখীকে তাহা বিলাইয়া দেয়। যাহার নাই, তাহাকেই দেয়, এতটুকু কার্পণ্য নাই, এতটুকু মুখ ভারী করা নাই। ব্ৰজবাবুর গৃহিণী যেদিন পরলোক গমন করেন, সেই দিন হইতে এ-সংসারে আর শৃঙ্খল ছিল না। সবাই আপনাকে লইয়া ব্যস্ত থাকিত ; কেহ কাহাকেও দেখিত না, কেহ কাহারও পানে চাহিত না । সকলেরই এক-একজন ভৃত্য মোতায়েন ছিল, তাহারা আপন আপন প্রভুর কাজ করিত। রন্ধনশালায় পাচক রন্ধন করিত, বৃহৎ অন্নসত্রের মত লোকে পাত পাড়িয়া বসিয়া খাইত। কেহ থাইতে পাইত, কেহ পাইত না। সে দুঃখ কেহু চাহিয়াও দেখিত না । কিন্তু যেদিন হইতে মাধবী তাহার ভাদ্র মাসের ভরা গঙ্গার মত রূপ, স্নেহ, মমতা লইয়া পিতৃভবনে ফিরিয়া আসিল, সেই দিন হইতে যেন সমস্ত সংসারে নবীন বসন্তু ফিরিয়া আসিয়াছে। এখন সবাই কহে, ‘বড়দিদি, সবাই বলে মাধবী । বাড়ির পোষা কুকুরটা পৰ্য্যন্ত দিনান্তে একবার বড়দিদিকে দেখিতে চাহে। এত লোকের মধ্যে সেও যেন একজনকে স্নেহময়ী সৰ্ব্বময়ী বলিয়া বাছিয়া রাখিয়াছে। বাড়ির প্রভু হইতে সরকার, গোমস্ত, দাস, দাসী সবাই ভাবে, বড়দিদির কথা, সবাই তাহার উপর নির্ভর করে, সকলেরই মনে মনে একটা ধারণা যে, যে কারণেই হোক, এই বড়দিদিটির উপর তাহার একটু বিশেষ দাবী अप्टिङ् ! স্বর্গের কল্পতরু কখনও দেখি নাই, দেখিব কি না তাহাও জানি না, স্বতরাং তাহার কথা বলিতেও পারিলাম না। কিন্তু, এই ব্ৰজবাবুর সংসারবত্তা লোকগুলো একটি কল্পতরু পাইয়াছিল। তলায় গিয়া হাত পাতিত, আর হাসিমুখে ফিরিয়া অাসিত। এরূপ পরিবারের মধ্যে স্বরেন্দ্রনাথ একটা নূতন ধরণের জীবন অতিবাহিত কৱিৰার উপায় দেখিতে পাইল। সকলে যখন একজনেরই উপর সমস্ত ভার $8s.