পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাপ্ত ভট্চাধ্যিমশাই কঁদিতে কঁাদিতে কহিলেন, বাবা, বাঘ নয়, সে একটা মস্ত ভালুক— লাফ মেরে বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে এলো । ছোড়দা ও যতীনদ বারংবার কহিতে লাগিল, ভালুক নয় বাবা, একটা নেকড়ে বাঘ ! হুম্ ক’রে ল্যাজ গুটিয়ে পাপোশের উপর বসেছিল। মেজদা’র চৈতন্য হইলে তিনি নিৰ্মীলিতচক্ষে দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া সংক্ষেপে কহিলেন, “দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ ! কিন্তু কোথা সে ? মেজদা’র ‘ণি রয়েল বেঙ্গল’ হোক আর রামকমলের "মস্ত ভালুক’ই হোক, সে আসিলই বা কিরূপে, গেলই বা কোথা ? এতগুলো লোক যখন দেখিয়াছে, তখন সে একটা কিছু বটেই ! তখন কেহ বা বিশ্বাস করিল, কেহ বা করিল না । কিন্তু সবাই লণ্ঠন লইয়া ভয়চকিত নেত্রে চারিদিকে খুজিতে লাগিল । অকস্মাৎ পালোয়ান কিশোরী সিং “উহু বয়ঠ, বলিয়াই একলাফে একেবারে বারান্দার উপর। তারপর সেও এক ঠেলাঠেলি কাণ্ড । এতগুলো লোক, সবাই এক সঙ্গে বারান্দায় উঠতে চায়,কাহারে মুহূৰ্ত্ত বিলম্ব সয় না। উঠানের এক প্রাস্তে একটা ডালিম গাছ ছিল, দেখা গেল, তাহারই ঝোপের মধ্যে বসিয়া একটা বৃহৎ জানোয়ার । বাঘের মতই বটে। চক্ষের পলকে বারান্দা খালি হইয়া বৈঠকখানা ভরিয়া গেল-জনপ্রাণী আর সেখানে নাই। সেই ঘরের ভিড়ের মধ্য হইতে পিসেমশায়ের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর আসিতে লাগিল—সড়কি লাও-বন্ধুক লাও । আমাদের পাশের বাড়ির গগণবাবুদের একটা মুঙ্গের গাদাবন্ধুক ছিল ; লক্ষ্য সেই অস্ত্রটার উপরে। ‘লাওত বটে, কিন্তু আনে কে ? ডালিম গাছটা যে দরজার কাছেই ; এবং তাহারই মধ্যে যে বাৰ বসিয়া ! হিন্দুস্থানীরা সাড়া দেয় না—তামাস দেখিতে যাহারা বাড়ি ঢুকিয়াছিল, তাহারাও নিস্তব্ধ । এমনি বিপদের সময়ে হঠাৎ কোথা হইতে ইন্দ্র আসিয়া উপস্থিত। সে বোধ করি মুমুখের রাস্তা দিয়া চলিয়াছিল, হাঙ্গামা শুনিয়া বাড়ি চুকিয়াছে। নিমেষে শতকণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল—ওরে বাঘ ! বাঘ ! পালিয়ে আয় রে ছোড়া, পালিয়ে আয় ! প্রথমটা সে ঘতমত ধাইয়া ছুটিয়া আসিয়া ভিতরে ঢুকিল। কিন্তু ক্ষণকাল পরেই ব্যাপারটা শুনিয়া লইয়া এক নিৰ্ভয়ে উঠানে নামিয়া গিয়া লণ্ঠন তুলিয়া বাঘ দেখিতে লাগিল । দোতলার জানালা হইতে মেয়েরা রুদ্ধনিশ্বাসে এই ডাকাত ছেলেটির পানে চাহিয়া দুর্গানাম জপিতে লাগিল। পিঙ্গীমা ত ভয়ে কাদিয়াই ফেলিলেন। নীচে § ۹- و