শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ
অমন রাঙ্গা পা-দুটি তার পছন্দ হ’ল না ?
মাধবী মুখ ফিরাইল-কথা কহিল না । মনোরম হাত দিয়া আদর করিয়া তাহার মুখ ফিরাইল—কৌতুক করিতে গিয়া দেখিল, তাহার দুই চক্ষে একরাশি জল আনিয়া দিয়াছে। আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, একি মাধবী।
মাধবী আর সামলাইতে পারিল না—চক্ষে অঞ্চল দিয়া কঁাদিয়া ফেলিল ।
মনোরমার বিস্ময়ের সীমা নাই—একটা উপযুক্ত কথাও সে খুজিয়া পাইল না। কিছুক্ষণ কাদিতে দিল । তাহার পর জোর করিয়া মুখ হইতে অঞ্চল খুলিয়ালইয়া নিতান্ত দুঃখিতভাবে বলিল, একটা সামান্য কৌতুক সইতে পারলে না বোন ?
মাধবী চক্ষু মুছতে মুছিতে বলিল, আমি যে বিধবা দিদি !
তাহার পর দুইজনেই চুপ করিয়া রহিল। দুইজনেই নীরবে কাদিতে লাগিল। মনোরমা কাদিতেছিল মাধবীর দুঃখে—সে বিধবা, তাই বলিয়া । কিন্তু মাধবীর অন্য কারণ ছিল । এখনি না জানিয়া মনোরম যে ঠাট্টা করিয়াছে, “ যে তোকে বৈ আর জানত না-মাধবী তাহাই ভাবিতেছিল। এ-কথা যে নিতান্ত সত্য, সে তাহ জানিত । অনেকক্ষণ পরে মনোরম বলিল, কাজটা কিন্তু ভাল হয়নি।
কোন কাজটা ?
তা কি বলে দিতে হবে বোন ?—আমি সব বুঝেছি।
এই ছয় মাস ধরিয়৷ যে-কথা মাধবী প্রাণপণে লুকাইয়া আসিতেছিল, মনোরমার কাছে আর তাহা লুকাইতে পারিল না। ধরা পড়িয়া মুখ লুকাইয়া কাদিতে লাগিল, বড় ছেলেমানুষের মত কঁাদিল ।
শেষকালে মনোরমা বলিল, কিন্তু গেল কেন ?
আমি যেতে বলেছিলাম।
বেশ করেছিলে—বুদ্ধিমতীর মত কাজ করেছিলে।
মাধবী বুঝিল, মনোরম। কিছুই বোঝে নাই—তাই একে একে সব কথা বুঝাইয়া কহিল । তাহার পর বলিল, কিন্তু তিনি যদি না বঁচিতেন, তাহ’লে বোধ হয় পাগল হয়ে যেতাম। মনোরমা মনে মনে কহিল,—এখনি বা তার কম কি ?
সেদিন বড় দুঃখিত হইয়া সে বাড়ি চলিয়া গেল । সেই রাত্রেই কাগজ-কলম লইয়া স্বামীকে পত্র লিখিতে বসিল—
তুমি ঠিক বলিতে—স্ত্রীলোককে বিশ্বাস নাই। আমিও আজ তাহাই বলিতেছি, কেন না, মাধবী আমাকে শিখাইয়াছে। আমি তাহাকে বাল্যকাল হইতে জানি, তাই তাহাকে দোষ দিতে ইচ্ছা হয় না, সাহস হয় না; সমস্ত
>歌曲
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
