পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रज्जलिनि স্ত্রীজাতিকে দোষ দিই—বিধাতাকে দোষ দিই—তিনি কি জন্য এত কোমল, এই জলের মত তরল পদার্থ দিয়া নারীর হৃদয় গড়িয়াছিলেন ? এত ভালবাসা ঢালিয়া দিয়া এ হৃদয় কে গড়িতে সাধিয়াছিল ? তাহার চরণে প্রার্থনা, যেন এ হৃদয়গুলা একটু শক্ত করিয়া নিৰ্ম্মাণ করা হয়। আর তোমার চরণে প্রার্থনা, যেন ঐ পায়ে মাথা রাখিয়া ঐ মুখপানে চাহিয়া মরিতে পারি। মাধবীকে দেখিয়া বড় ভয় হয়,—সে আমার আজন্মের ধারণ ওলট-পালট করিয়া দিয়াছে । আমাকেও বেশী বিশ্বাস করিও না—ণীঘ্র আসিয়া লইয়া যাইও । তাহার স্বামী উত্তর লিখিলেন— যাহার রূপ আছে, সে দেখাইবেই। যাহার গুণ আছে, সে প্রকাশ করিবেই। যাহার হৃদয়ে ভালবাসা আছে, যে ভালবাসিতে জানে,—সে ভালবাসিবেই । মাধবীলতা রসাল বৃক্ষ অবলম্বন করে, ইহা জগতের রীতি—তুমি আমি কি করিতে পারি ? তোমাকে আমি খুব বিশ্বাস করি—সেজন্য চিন্তিত হইও না। মনোরম স্বামীর পত্র মাথায় রাখিয়া মনে মনে তাহার চরণ-উদ্দেশে প্রণাম করিয়া লিখিল—মাধবী পোড়ামুখী—বিধবাকে যাহা করিতে নাই, সেই তাই করিয়াছে। মনে মনে আর-একজনকে ভালবাসিয়াছে । পত্র পাইয়া মনোরমার স্বামী মনে মনে হাসিলেন। তাহার পর কৌতুক করিয়া লিখিলেন,—মাধবী পোড়ামুখী তাহাতে আর সন্দেহ নাই, কেননা, বিধবা হইয়া মনে মনে আর একজনকে ভালবাসিয়াছে । তোমাদের রাগ হইবার কথা—বিধবা হইয়া কেন সে তোমাদের সধবার অধিকারে হাত দিতে গিয়াছে। আমি যতদিন বাচিয়া থাকিব, তোমার কোন চিন্তা নাই, এমন সুবিধা কিছুতেই ছাড়িও না । এই অবসরটুকুর মধ্যে পরম আরামে আর একজনকে মনে মনে ভালবাসিয়া লইও । কিন্তু, কি জানো মনোরমা, তুমি আমাকে আশ্চৰ্য্য করিতে পারো নাই, আমি একবার একটা লতা দেখিয়াছিলাম, সেটা আধ-ক্রোশ ধরিয়া ভূমিতলে লতাইয়া লতাইয়। অবশেষে একটা বৃক্ষে জড়াইয়া উঠিয়ছিল। এখন তাহাতে কত পাত, কত পুষ্পমঞ্জরী। তুমি যখন এখানে আসিবে, তখন দুইজনে সেটিকে দেখিয়া আসিব । মনোরমা রাগ করিয়া তাহার উত্তর দিল না । কিন্তু মাধবীর চোখের কোণে কালি পড়িয়াছে, প্রফুল্ল মুখ ঈষৎ গম্ভীর হইয়াছে, কাজকর্মে তেমন বাধুনি নাই—একটু চিলা রকমের হইয়াছে। সকলকে যত্ন আত্মীয়তা করিবার ইচ্ছা তেমনই আছে, বরং বাড়িয়াছে—কিন্তু সব কাজগুলা আর তেমন মনে থাকে না—মাঝে মাঝে ভুল হইয়া যায়। ➢¢ ግ