পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখের প্রতি চাহিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিল। সে ভাবিয়াছিল, ইহার পরে কাহারও কোন কথাই আর থাকিতে পারে না—দোষ-স্বীকারের সঙ্গে সঙ্গেই তাহার সমাপ্তি হইয়া যায়। কিন্তু এ সংবাদ তাহার জানা ছিল না যে, দুষ্ট ব্রণের মত এমন মানুষও আছে, যাহার বিষাক্ত ক্ষুধা একবার কাহারও ত্রুটির মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিলে আর কোন মতেই নিবৃত্ত হইতে চাহে না। তাই বিলাস যখন প্রত্যুত্তরে কহিল, তা হলে পূর্ণ গাঙ্গুলীকে জানিয়ে পাঠান যে রাসবিহারীবাবু যে হুকুম দিয়েছেন, তার অন্যথা করা আপনার সাধ্য নয়, তখন বিজয়ার দৃষ্টির সম্মুখে এই লোকটির হিংস্র প্রকৃতিটা একমুহূর্তেই একেবারে পরিস্ফুট হইয়া দেখা দিল। সে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে কহিল, সেটা কি ঢের বেশী অন্যায় কাজ হবে না? আচ্ছা, আমি নিজেই নাহয় চিঠি লিখে তাঁর অনুমতি নিচ্চি।

বিলাস বলিল, এখন অনুমতি নেওয়া-না-নেওয়া দুই-ই সমান। আপনি যদি তাঁকে সমস্ত গ্রামের মধ্যে অশ্রদ্ধার পাত্র করে তুলতে চান, আমাকেও তা হলে অত্যন্ত অপ্রিয় কর্তব্য পালন করতে হবে।

বিজয়ার অন্তরটা অকস্মাৎ ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল; কিন্তু সে আত্মসংযম করিয়া ধীরভাবে প্রশ্ন করিল, এই কর্তব্যটা কি শুনি?

বিলাস বলিল, আপনার জমিদারি শাসনের মধ্যে তিনি যেন আর হাত না দেন।

আপনার নিষেধ তিনি শুনবেন, আপনি মনে করেন?

অন্ততঃ সেই চেষ্টাই আমাকে করতে হবে।

বিজয়া ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া অন্য দিকে চাহিয়া, তেমনি শান্তকণ্ঠেই জবাব দিল, বেশ, আপনি যা পারেন করবেন; কিন্তু অপরের ধর্ম-কর্মে আমি বাধা দিতে পারব না।

তাহার কণ্ঠস্বরের মৃদুতা সত্ত্বেও তাহার ভিতরের ক্রোধ গোপন রহিল না। বিলাস তীব্রকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, আপনার বাবা কিন্তু এ কথা বলতে সাহস করতেন না।

বিজয়া ফিরিয়া দাঁড়াইয়া চোখ তুলিয়া তাহার মুখের প্রতি চাহিল; কহিল, আমার বাবার কথা আপনার চেয়ে আমি ঢের বেশী জানি বিলাসবাবু। কিন্তু সে নিয়ে তর্ক করে কি হবে? আমার স্নানের বেলা হল, আমি উঠলুম। বলিয়া সে সমস্ত বাগ্‌বিতণ্ডা জোর করিয়া বন্ধ করিয়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইবামাত্রই ক্রোধোন্মত্ত বিলাসের মুখের উপর হইতে তাহার ধার-করা ভদ্রতার মুখোশ একমুহূর্তে খসিয়া পড়িল। সে নিজেও স্বভাবটাকে একেবারে অনাবৃত উলঙ্গ