পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত একটা জিনিস লক্ষ্য করিতেছিলাম। প্রায়ই দেখিতেছি, কাছাকাছি এক-একটা জনার, ভুট্টাগাছের ডগা ভয়ানক আন্দোলিত হইয়া, ছপাৎ করিয়া শব্দ হইতেছে। একটা প্রায় আমার হাতের কাছেই। সশঙ্কিত হুইয়া সেদিকে ইন্দ্রের মনোযোগে আকৃষ্ট করিলাম। ধাড়া শুয়ার না হইলেও বাচ্চ টাচ্চ নয় তো ? ইন্দ্র অত্যন্ত সহজভাবে কহিল, ও কিছু না—সাপ জড়িয়ে আছে ; তাড়া পেয়ে জলে ঝাপিয়ে পড়েছে। কিছু ন—সাপ | শিহরিয়া নৌকার মাঝখানে জড়সড় হইয়া বসিলাম। অঙ্কুটে কহিলাম, কি সাপ ভাই ? ইন্দ্ৰ কহিল, সব রকম আছে, টোড়া, বোড়ী, গোখরো, করেত —জলে ভেসে এসে গাছে জড়িয়ে আছে- কোথাও ডাঙা নেই দেখছিসনে ? সে ত দেখচি। কিন্তু ভয়ে যে পায়ের নখ হইতে মাথার চুল পৰ্য্যস্ত আমার কাটা দিয়া রহিল। সে লোকটি কিন্তু ভ্ৰক্ষেপমাত্র করিল না, নিজের কাজ করিতে করিতে বলিতে লাগিল, কিন্তু কামড়ায় না। ওরা নিজেরাই ভয়ে মরচে—দুটোতিনটে ত আমার গা ঘেষে পালালো। এক-একটা মস্ত বড় —সেগুলো বোড়ী-টোড়া হবে বোধ হয়। আর কামড়ালেই বা কি করব ! মৰ্বতে একদিন ত হবেই ভাই ! এমনি আরও কত কি সে মৃদু স্বাভাবিক-কণ্ঠে বলিতে বলিতে চলিল, আমার কানে কতক পৌছিল কতক পৌছিল না। আমি নিৰ্ব্বাক-নিম্পন্দ্র কাঠের মত আড়ষ্ট হইয়া একস্থানে একভাবে বসিয়া রহিলাম। নিশ্বাস ফেলিতেও যেন ভয় করিতে লাগিল— ছপাৎ করিয়া একটা যদি নৌকার উপরেই পড়ে ! কিন্তু সে ধাই হোক, ওই লোকটি কি ! মাস্থ্য ! দেবতা ? পিশাচ কে ও । কার সঙ্গে এই বনের মধ্যে ঘুরিতেছি? যদি মাহবই হয়, তবে ভয় বলিয়। কোন বস্তু যে বিশ্বসংসারে আছে, সে কথা কি ও জানেও না ! বুকখানা কি পাথর দিয়া তৈরী ? সেটা কি আমাদের মত সঙ্কুচিত বিস্ফারিত হয় না ? তবে ষে সেদিন মাঠের মধ্যে সকলে পলাইয় গেলে, সে নিতান্ত অপরিচিত আমাকে একাকী নির্বিবঘ্নে বাহির করিবার জন্য শক্রর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল, সে স্বয়ামায়াও কি ওই পাথরের মধ্যেই নিহিত ছিল । আর আজ ? সমস্ত বিপদের বার্তা তন্নতর করিয়া জানিয়া শুনিয়া নিঃশব্দে অকুষ্ঠিতচিত্তে এই ভয়াবহু, অতি ভীষণ মৃত্যুর মুখে নামিয়া দাড়াইল, একবার একটা মুখের অনুরোধও করিল না— একান্ত তুই একবার নেমে যা । সে ত জোর করিয়াই আমাকে নামাইয়ারি নৌকা টানাইতে পারিত ! এ ত শুধু খেলা নয় । জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়াইয়া এই স্বাৰ্থত্যাগ এই বয়সে কয়টা লোক করিয়াছে । ঐ যে বিনা আড়ম্বরে সামান্ত > * oاستقلا