পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭ বড় ঘুম পেয়েছে ইক্স, বাড়ি ফিরে চল না ভাই ! ইন্দ্র একটুখানি হাসিয়া ঠিক যেন মেয়েমানুষের মত স্নেহাৰ্দ্ৰ কোমল-স্বরে কথা কহিল । বলিল, ঘুম ত পাবার কথাই ভাই! কি করব শ্ৰীকান্ত, আজ একটু দেরি হবেই—অনেক কাজ রয়েছে। আচ্ছা, এক কাজ কর না কেন ? ঐখানে একটু গুয়ে ঘুমিয়ে নে না ? আর দ্বিতীয় অনুরোধ করিতে হইল না। আমি গুটিগুটি হইয়া সেই তক্তাখানির উপর গুইয়া পড়িলাম। কিন্তু ঘুম আসিল না। স্তিমিতচক্ষে চুপ করিয়া আকাশের গায়ে মেঘ ও চাদের লুকোচুরি খেলা দেখিতে লাগিলাম। ঐ ডোবে, ঐ ভাসে, আবার ডোবে, আবার ভাসে । আর কানে আসিতে লাগিল—জলস্রোতের সেই একটান হুঙ্কার । fর একটা কথা প্রায়ই মনে পড়ে। সেদিন অমন করিয়া সব ভুলিয়া মেঘ ও চাদের মধ্যে ডুবিয়া গিয়াছিলাম কি করিয়া ? সে ত আমার তন্ময় হইয়া চাদ দেখিবার বয়স ময় ! কিন্তু ঐ যে বুড়োর পৃথিবীর অনেক ব্যাপার দেখিয়া-শুনিয়া বলে যে, ওই বাহিরের চাদটাও কিছু না, মেঘটাও কিছু না, সব ফাকি—সব ফাকি ! আসল যা কিছু, তা এই নিজের মনটা । সে যখন যাকে ষা দেখায়, বিভোর হইয়া সে তখন তাই শুধু দেখে । আমারও সেই দশা। এত রকমের ভয়ঙ্কর ঘটনার ভিতর দিয়া এমন নিরাপদে বাহির হইয়া আসিতে পারিয়া আমার নিজীব মনটা তখন বোধ করি এমন-কিছু একটা শাস্ত ছবির অন্তরেই বিশ্রাম করিতে চাহিয়াছিল । o ইতিমধ্যে যে ঘণ্টা-দুই কাটিয়া গেছে, তাহা টেরও পাই নাই। হঠাৎ মনে হইল আমার, চাদ যেন মেঘের মধ্যে একটা লম্বা ডুব-সাতার দিয়া একেবারে ডানদিক হইতে ব্যদিকে গিয়া মুখ বাহির করিলেন । ঘাড়টা একটু তুলিয়া দেখিলাম, নৌকা এবার ওপারে পাড়ি দিবার আয়োজন করিয়াছে। প্রশ্ন করিবার ৰা একটা কথা কহিবার উদ্যমও তখন বোধ করি আমার মধ্যে আর ছিল না ; তাই তখনি আবার তেমনি করিয়া গুইয়া পড়িলাম। আবার সেই দুচক্ষু ভরিয়া চাদের খেলা এবং ছ’কান ভরিয়া স্রোতের তর্জন । বোধ করি আরও ঘণ্টা-খানেক কাটিল । খসূ—সূ—বালুর চরে নৌকা বাধিয়াছে। ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বসিলাম । এই ৰে এপারে আসিয়া পৌঁছিয়াছি। কিন্তু এ কোন জায়গা ? বাড়ি আমাদের কত ঘরে ? বায়ুকার রাশি ভিন্ন আর কিছুই ত কোথাও দেখি না? প্রশ্ন করিবার পূৰ্ব্বেই হঠাৎ নিকটেই কোথায় যেন কুকুরের কলহ শুনিতে পাইয়া আরও সোজা হুইয়া ৰসিলাম । কাছেই লোকালয় আছে নিশ্চয় । ১ষ্ট