পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকলেই ব্রাহ্মসমাজের নহেন, সম্ভবতঃ তাঁহারা রাসবিহারীর সনির্বন্ধ অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়াই আসিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।

রাসবিহারী সকলকেই পরম সমাদরে গ্রহণ করিলেন এবং বিজয়ার সহিত যাঁহাদের সাক্ষাৎ-পরিচয় ছিল না, তাঁহাদের পরিচিত করাইতে গিয়া অচির-ভবিষ্যতে এই মেয়েটির সহিত নিজের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের ইঙ্গিত করিতেও ত্রুটি করিলেন না। বিজয়া অস্ফুট-কণ্ঠে অভ্যর্থনা করিয়া তাঁহাদিগকে আসন গ্রহণ করিতে অনুরোধ করিল। এই সকল প্রচলিত ভদ্রতা-রক্ষার কার্যে সে যখন ব্যাপৃত, তখন অদূরে বাগানের সঙ্কীর্ণ পথে দয়ালবাবু দেখা দিলেন। কিন্তু তিনি একা নহেন, একজন অপরিচিত তরুণী আজ তাঁহার সঙ্গে। মেয়েটি সুশ্রী, বয়স বোধ করি বিজয়ার অপেক্ষা কিছু বেশী। কাছে আসিয়া দয়াল তাহাকে আপনার ভাগ্নী বলিয়া পরিচয় দিলেন। নাম নলিনী, কলিকাতার কলেজে বি. এ. পড়ে। এখনো গরমের ছুটি শুরু হয় নাই বটে, কিন্তু মামীর অসুখে সেবা করিবার জন্য কিছু পূর্বেই দিন-দুই হইল মামার কাছে আসিয়াছে, এবং স্থির হইয়াছে, গ্রীষ্মের অবকাশটা এইখানেই কাটাইয়া যাইবে। নলিনীকে যে বিজয়া কলিকাতায় একেবারে দেখে নাই তাহা নহে, কিন্তু আলাপ ছিল না। তথাপি এতগুলি পরিচিত ও অপরিচিত পুরুষের মধ্যে আজ সেই তাহার কাছে সকলের চেয়ে অন্তরঙ্গ বলিয়া মনে হইল। বিজয়া দুই হাত বাড়াইয়া তাঁহাকে গ্রহণ করিয়া ঘরের মধ্যে টানিয়া আনিল, এবং পাশে বসাইয়া ভাব করিতে আরম্ভ করিয়া দিল।

উপাসনা সাড়ে-নয়টার সময় শুরু করিবার কথা। তখনো কিছু বিলম্ব ছিল বলিয়া, সকলেই বাহিরের বারান্দায় দাঁড়াইয়া আলাপ করিতেছিলেন, এমন সময় রাসবিহারীর উচ্চকণ্ঠ ঘরের মধ্যে হইতে শোনা গেল। তিনি অত্যন্ত আদর করিয়া কাহাকে যেন বলিতেছিলেন, এসো বাবা, এসো। তোমার কত কাজ, তুমি যে সময় করে আসতে পারবে এ আমি আশা করিনি।

এই সম্মানিত কাজের ব্যক্তিটি কে জানিবার জন্য বিজয়া মুখ তুলিয়া সম্মুখেই দেখিল নরেন্দ্র। কিন্তু অসম্ভব বলিয়া হঠাৎ তাহার প্রত্যয় হইল না। নলিনীও একই সঙ্গে কৌতূহলবশে মুখ তুলিয়া কহিল, নরেন্দ্রবাবু।

রাসবিহারী তাহাকে আহ্বান করিয়াছেন, এবং সে সেই নিমন্ত্রণ রাখিতে এই বাটীতে প্রবেশ করিয়াছে। ঘটনাটা এমনি অচিন্তনীয় যে, বিজয়ার সমস্ত চিন্তাশক্তি পর্যন্ত যেন বিপর্যস্ত হইয়া গেল। আর সে সেদিকে মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিল না কিন্তু, রাসবিহারীর সবিনয় অভ্যর্থনা স্পষ্ট শুনিতে পাইল, এবং