পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আবেদন-নিবেদন একেবারেই ব্যর্থ হইয়া গেল। সে কোনদিকে ক্ৰক্ষেপই করিল না। দক্ষিণদিকের চরের বিস্তৃতিবশতঃ এ জায়গাটা একটি ছোট-খাটে হ্রদের মত হইয়াছিল—শুধু উত্তরদিকের মুখ খোলা ছিল । জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা, ডিডি বেঁধে উপরে উঠবার ত ঘাট নেই, তুমি যাবে কি করে ? ইক্স কহিল, ঐ যে বটগাছ, ওর পাশেতেই একটা সরু ঘাট আছে। কিছুক্ষণ হইতে কেমন একটা দুৰ্গন্ধ মাঝে মাঝে হাওয়ার সঙ্গে নাকে জাসিয়া লাগিতেছিল। যত অগ্রসর হইতেছিলাম, ততই সেটা বাড়িতেছিল। এখন হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে সেই দুৰ্গন্ধটা এমন বিকট হইয়া নাকে লাগিল যে, অসহ ৰোধ হইল। নাকে কাপড় চাপা দিয়া বলিলাম, নিশ্চয় কি পচেছে, ইন্দ্ৰ ! ইন্দ্র বলিল, মড়া। আজকাল ভয়ানক কলেরা হচ্ছে কিনা। সবাই ত পোড়াতে পারে না—সুখে একটুখানি আগুন ছুইয়ে ফেলে দিয়ে যায়। শিয়াল-কুকুরে খায় জার পচে । তারই অত গন্ধ । কোম্‌ধানে ফেলে দিয়ে যায় ভাই । ঐ হোথা থেকে হেথা পৰ্য্যন্ত—সবটাই শ্মশান কি না । যেখানে হোক ফেলে রেখে বটতলার ঘাটে চান করে বাড়ি চলে যায়,-আরে দূর । ভয় কি রে! ও শিয়ালেশিয়ালে লড়াই করচে । আচ্ছা আয়, জায়, আমার কাছে এসে বোস । আমার গল দিয়া স্বর ফুটল না—কোনমতে হামাগুড়ি দিয়। তাহার কোলের কাছে গিয়া বসিয়া পড়িলাম। সে ক্ষণকালের জন্য আমাকে একবার স্পর্শ করিয়া হাসিয়া কহিল, ভয় কি শ্ৰীকান্ত ? কত রাত্তিরে একা একা আমি এই পথে যাই আলি– তিনবার রাম নাম করলে কার সাধ্যি কাছে আসে ? তাহাকে স্পর্শ করিয়া দেহটাতে যেন একটু সাড়া পাইলাম—অস্ফুটে কহিলাম, না ভাই, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, এখানে কোথাও নেবো না-সোজ। বেরিয়ে চল । সে আবার আমার কাধে হাত ঠেকাইয়া বলিল, ন শ্ৰীকান্ত, একটিবার যেতেই হবে । এই টাকা ক’টি না দিলেই নয়—তারা পথ চেয়ে বসে আছে—আমি তিন দিন আসতে পারিনি । টাকা কাল দিয়ে না ভাই । না ভাই, অমন কথাটি বলিস্নে। আমার সঙ্গে তুইও চল—কিন্তু কারুকে এ কথা বলিস্নে যেন । আমি অফুটে ‘না বলিয়া তাহাকে তেমৃনি স্পর্শ করিয়া পাথরের মত বসিয়া রহিলাম। গলা গুকাইয়। কাঠ হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু হাত বাড়াইয়া জল লইব, কি নড়াচড়ার কোন প্রকার চেষ্টা করিব, এ সাধ্যই আমার আর ছিল না। 출