পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ বয়সের সন্মান-জ্ঞানটা যেমন পুরুষের মধ্যে আছে, স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে তেমন নাই। পুরুষের মধ্যে অনেকগুলি পৰ্য্যায় আছে—যেমন দশ, কুড়ি, ত্রিশ, চশি, পঞ্চাশ, যাট প্রভৃতি । ত্রিশবর্ষীয় একজন যুব বিশ বছরের একজন যুবার প্রতি মুরুবিয়ানার চোখে চাহিয়া দেখিতে পারে, কিন্তু মেয়েমহলে এটা থাটে না । তাহারা বিবাহকালটা পৰ্য্যস্ত বড় ভগিনী, ভাতৃজায়া, জননী পিসীমা অথবা ঠাকুর-মাতার নিকট অল্পস্বল্প উমেদারী করে, নারী-জীবনে যাহা কিছু অল্পবিস্তর শিখিবার আছে, শিখিয়া লয় ; –তাহার পরই একেবারে প্রথম শ্রেণীতে চড়িয়া বসে। তখন ষোল হইতে ছাপ্পায় পৰ্য্যস্ত তাহারা সমবয়সী । স্থানভেদে হয় ত বা কোথাও এ নিয়মের সামান্ত ব্যতিক্রম দেখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই এমনি ! অস্ততঃ চন্দ্রনাথের গ্রাম-সম্পৰ্কীয়া ঠান্‌দিদি হরিবালার জীবনে এমনটি দেখিতে পাওয়া গিয়েছিল। সেদিন অপরাহ্লে পশ্চিমদিকের জানালা খুলিয়া সরযু আকাশের দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়াছিল। হরিবালা এক থালা মিষ্টান্ন এবং একগাছি মোট দুইয়ের মালা হাতে লইয়া একেবারে সরযুর নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। মালাগাছটি তাহাকে পরাইয়া দিয়া বলিলেন, আজ থেকে তুমি আমার সই হ’লে। বল দেখি ग्रहै সরযু একটু বিপন্ন হইল। তথাপি অল্প হাসিয়া কহিল, বেশ । বেশ ত নয় দিদি, সই ব’ল ডাকৃতে হবে । ইহাকে আদরই হল, আর আবদারই বল, সরযুর জীবনে ঠিক এমনটি ইতিপূৰ্ব্বে ঘটা উঠে নাই, তাই এই আকস্মিক আত্মীযতাকে সে মনের মধ্যে মিলাইয়া লইতে পারিল না। একদণ্ডে একজন দিদিমার বয়সী লোকের গলা ধরিয়া ‘সই’ বলিয়া আহবান করিতে তাহার লজ্জা করিতে লাগিল, কিন্তু হরিবালা যে ছাড়েন না । ইহাতে অভিনবত্ব কিংবা অস্বাভাবিকতা যে কিছু থাকিতে পারে হরিবালার তাহা ধারণায় নাই। তাই সরযুর মুখ হইতে এই প্রিয়-সম্বোধনটির বিলম্ব দেখিয়া একটু গভীরভাবে, একটু মান হইয়া তিনি কহিলেন, তবে আমার মালা ফিরিয়ে দাও, অামি আর কোথাও যাই । গৱৰু বিপর হইয়াছিল, কিন্তু অপ্রতিভ হয় নাই, ঈষৎ হাসিয়া মৃদ্ধশ্বরে কহিল, স্বইয়ের সন্ধানে না কি ? ঠাদিদি একটুখানি স্থির থাকিয়া বলিলেন, বাঃ! এই যে বেশ কথা কও। তবে যে লোকে বলে, ওদের বেী বোবা ।

  • 8ty