পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ খুড়া হরিনালের রিক্ত মুখের দিকে চাহিয়া এইবার একটু অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন, কি জানি বাবাজী, স্মরণ ত কিছুই হয় না। হরিদয়াল ক্ষশক্ষাল স্থির থাকিয়া গম্ভীরভাবে বলিলেন, আচ্ছা, সংসারের যেন কোন কাজই না করলে, কিন্তু পরকালটা মান ত ? মানি বৈ কি ! তবে ? সেকালের একটা কাজও করেছ কি ? একদিনের তরেও মন্দিয়ে গিয়েছিলে ? কৈলাস বিস্মিত হইয়া বলিলেন, কি বল দয়াল, মন্দিরে যাইনি ! কত দিন গিয়েছি। দয়াল তেমনি গম্ভীর হইয়াই বলিতে লাগিলেন, তুমি এই বিশ বৎসৱ কাশবাসী হয়েছ, কিন্তু বোধ হয় বিশ দিনও ঠাকুর-দর্শন করোনি—পূজা-পাঠ ত দূরের কথা! কৈলাস প্রতিবাদ করিয়া বলিলেন, না দয়াল, বিশ দিনের বেশী হবে ; তবে কি জান বাবাজী, সময় পাই না ব’লেই পুজোটুজোগুলো হয়ে উঠে না। এই দেখ ন, সকাল বেলাটা শম্ভু মিশিরের সঙ্গে এক চালু বসতেই হয়—লোকটা খেলে ভাল । এক বাজি শেষ হ’তেই দুপুর বেজে যায়, তারপর আহ্নিক সেরে পাক করতে, আহার করতে বেলা শেষ হয় । তার পর বাবাজী, গঙ্গা পাড়ের—ত। যাই বল, লোকটার খেলার বড় তারিফ-আমাকে স্তু যেনি প্রায় মাত করেছিল। ঘোড়া আর গজ দু’টো দু’কোণ থেকে চেপে এসে-জ়ী বলি বুঝি— g আঃ ! থামো না খুড়ো—দুপুর বেলা কি কর, তাই বল । দুপুর বেলা ? গঙ্গা পাড়ের সঙ্গে—তার গজ দু'টো—এই কালই দেখ না— দয়াল অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া বাধা দিয়া বলিলেন, হয়েচে, হয়েচে–ছুপুর বেলা গঙ্গা পাড়ে, আর, সন্ধ্যার পর মুকুন্দ ঘোষের বৈঠকখানা—আর তোমার সময় কোথায় ? কৈলাস চুপ করিয়া রহিলেন-হরিদয়াল অধিকতর গম্ভীর হইয়া উপদেশ দিতে লাগিলেন, কিন্তু খুড়ো, দিনও ত আর বেশী নেই। পরকালের জন্যও প্রস্তুত হওয়া উচিত, আর সে কথা কিছু কিছু ভাবাও দরকার। দাবার পুট্‌লিট আর সঙ্গে নিতে পারবে না । কৈলাস হঠাৎ হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলিলেন, ন! দয়াল, দাবার পুংলিট বোধ করি সঙ্গে নিতে পারব না। আর প্রস্তুত হবার কথা বলুচ বাবাজী ? প্রস্তুত আমি হয়েই আছি। যে দিন ডাক আসবে, ঐটে কারু হাতে তুলে দিয়ে সোজা রওনা হয়ে পড়ব—সেজন্তে চিত্তার বিষয় আর কি আছে ? váto