পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রনাথ স্বসংবাদ শেষ পর্য্যস্ত টিকিবে কি না । তিনি ভাবিলেন, যদি নাই টিকে, উপায় নাই। কিন্তু যদি অদৃষ্ট স্বপ্রসন্ন হইয়াই থাকে, যদি ভগবান এতদিন পরে সত্যই মুখ তুলিয়া চাহিয়া থাকেন; তাহা হইলে বোনঝিটি এখনও আছে-এখনো সে পরের হাতে গিয়া পড়ে নাই—এই তার সময় । যাহাই হৌক, শেষ পর্য্যন্ত যে প্রাণপণ করিয়া দেখিতেই হইবে, তাহাতে আর তাহার কিছুমাত্র সংশয় রহিল না. তিনি মুখ স্নান করিয়া যেখানে চন্দ্রনাথ লেখাপড়া করিতেছিল, সেইখানে আসিয়া উপবেশন করিলেন। র্তাহার মুখের ভয়ঙ্কর ভাব দেখিয়া চন্দ্রনাথ চিন্তিত হইয়া বলিল, কি হয়েছে মামীম ? হরকালী শিরে করাঘাত করিয়া কাদ-কাদ হইয়া বলিলেন, বাবা চন্দ্রনাথ, দুঃখী ব’লে কি আমাদের এত শাস্তি দিতে হয় । চন্দ্রনাথ হতবুদ্ধি হইয়া গেল, সে কি করিয়াছে, তাহা, কিছুতেই ভাবিয়া পাইল না । হরকালী বলিতে লাগিলেন, আর বাকী কি ? একমুঠো ভাতের জন্ত জাত গেল, ধৰ্ম্ম গেল । বাবা, খাবার থাকলে কি তুমি এমন ক’রে আমাদের সর্বনাশ করতে পারতে ? চন্দ্রনাথ ক্ষণকাল চুপ করিয়৷ থাকিয়া অনেকটা শান্তভাবে কহিল, হয়েছে কি ? হরকালী আঁচল দিয়া মিথ্যা চোখ মুছিয়া বলিলেন, পোড়া কপালে যা হ’বার তাই হয়েচে । আমার সোনার চাদ তুমি, তোমাকে ডাকিনীরা ভুলিয়ে এই কাণ্ড করেছে। পায়ে পড়ি, মামীম খুলে বল । আর কি বলব ? তোমার খুড়োকে জিজ্ঞেস কর । চন্দ্রনাথ এবার বিরক্ত হইল : বলিল, খুড়োকেই যদি জিজ্ঞেস করব, তবে তুমি আমন করচ কেন ? আমাদের সর্বনাশ হয়েছে, তাই এমন কচ্চি বাবা,—আর কেন ? চন্দ্রনাথ মাতুল ও মাতুলানীকে সথেষ্ট শ্রদ্ধা-ভক্তি করিত, কিন্তু ওরূপ ব্যবহারে অত্যন্ত বিরক্ত হইতে হুয়, সে বিরক্ত হইয়াছিল, আরো বিরক্ত হইয়া বলিল, যদি সৰ্ব্বসাশ হয়েই থাকে ত অন্য ধরে যাও--আমার সাম্নে অমন কোরো না। হরকালী তখন চন্দ্রনাথের মৃত-জননীর নামোচ্চারণ করিয়া উচ্চৈস্বরে কাদিয়া উঠিলেন—ওগে, তুমি আমাদের ডেকে এনেছিলে, আজ তোমার ছেলে তাড়িয়ে দিতে চায় গো । R. চন্দ্রনাথ ব্যাকুল হইয়া মামীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, খুলে না বললে

  • West