পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম পরিচ্ছেদ সেই রাত্রে সরযু নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া কাদিয়া ফেলিয়া মনে মনে কহিল, আমি বিষ খেতে কিছুতেই পারব না। હન হ’লে মরতে পারতাম, কিন্তু আমি ত অার এক নই-আমি যে মা ! মা হয়ে সস্তান বধ করব কেমন ক’রে ? তাই সে মরিতে পারিল না । কিন্তু তাহার সুখের দিন যে নি:শেষ হইয়াছে, তাহাতেও তাহার লেশমাত্র সংশয় রহিল না । - গভীর রাত্রে চন্দ্রনাথ সহসা তাহার স্ত্রীর ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল এবং সমস্ত শুনিয়া উন্মত্ত-আবেগে তাহাকে বক্ষে তুলিয়া লইয়া স্থির হইয়া রহিল। অক্ষুটে বারংবার কহিতে লাগিল, এমন কাজ কখনো করে না সরযু, কখনো না। কিন্তু ইহার অধিক সে ত আর কোন ভরসাই দিতে পারিল না। তাহার এই বৃহৎ ভবনে এই হতভাগিনীর জন্য এতটুকু কোণের সন্ধানও ত সে খুজিয়া পাইল না, যেখানে সরযু তাহার লজ্জাহত পাংশু মুখখানি লুকাইয়া রাখিতে পারে। সমস্ত গ্রামের মধ্যে কোথাও এক বিন্দু মমতাও সে কল্পনা করিতে পারিল না, যাহার আশ্রয়ে সে তপ্ত অশ্রুরাশির একটি কণাও মুছিতে পারে। কাদিয়া কাটিয়া সে সাত দিনের সময় ভিক্ষা করিয়া লইয়াছে। ভাদ্র মাসের এই শেষ সাতটি দিন সে স্বামীর আশ্রয়ে থাকিয়া চিরদিনের মত নিরাশ্রিতা পথের ভিখারিণী হইয়া যাইবে । ভাদ্র মাসে ঘরের কুকুর বিড়াল তাড়াইতে নাই,-গৃহস্থের অকল্যাণ হয়, তাই সরযুর এই আবেদন গ্রাহ হইয়াছে। একদিন সে স্বামীর হাত ধরিয়া বলিল, আমার দূরদৃষ্ট আমি ভোগ করব, সে জন্য তুমি দুঃখ কোরো না। আমার মত দুর্ভাগিনীকে ঘরে এনে অনেক সহ করেছ, আর কোরে, না। বিদায় দিয়ে আবার সংসারী হও, আমার এমন সংসার যেন ভেঙ্গে ফেলো না । চন্দ্রনাথ ইেটমুখে নিরুত্তর হইয়া থাকে। ভাল মন্দ কোন জবাবই খুজিয়া পায় না। তবে, এই কথাটা তাহার মনে হইতেছে, আজকাল সরযু যেন মুখরা হইয়াছে। বেশী কিছু কথা কহিতেছে। এতদিন তাহার মনের মধ্যে যে ভয়ট। ছিল, এখন তাহা নাই। দু'দিন পূৰ্ব্বে সে মুখ ঢাকিয়া মুখোস পরিয়া এ সংসারে বাস করিতেছিল ; তখন সামান্ত বাতাসেও ভয় পাইত, পাছে তাহার ছদ্ম আবরণ খসিয়া পড়ে, পাছে তাহার সত্য পরিচয় জানাজানি হইয়া যায়। এখন তাহার সে ভয় গিয়াছে। তাই এখন নিৰ্ভয়ে কথা কহিতেছে। এ জীবনে তাহার যাহা-কিছু ছিল, সেই স্বামী, তাহার সর্বস্ব, সমাজের আদালত ডিক্রি জারি করিং