পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এই সময় সরযু বুকের কাছে একটা ব্যথা অনুভব করিল, সামলাইতে পারিল না, বসিয়াছিল, গুইয়া পড়িল। মুখখানি একেবারে বিবর্ণ হইয়া গেল। ব্যস্ত হইয়া চন্দ্রনাথ নীচে নামিয়া পড়িল, কাছে আসিয়া হাত ধরিয়া তুলিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু সরযু একেবারে এলাইয়া পড়িয়াছিল। তখন শিয়রে বসিয়া ক্রোড়ের উপর তাহার মাথাটা তুলিয়া কাদ-কঁাদ হইয়া ডাকিল, সরযু ! সরযু চোখ খুলিয়া এক মুহূৰ্ত্ত তাহার স্বামীর মুখের পানে চাহিয়া দেখিয়া চোখ ; বুঞ্জিল। তাহার ওষ্ঠাধর র্কাপিয়া উঠিল এবং অস্পষ্ট কি বলিল, বোঝা গেল না। চন্দ্রনাথ অত্যন্ত ভয় পাইয়া জলের জন্য হাকাহাকি করিতে লাগিল । লখীয়ার মা নিকটেই ছিল, জল লইয়া ঘরে ঢুকিল, কিন্তু কোনরূপ ব্যস্ততা প্রকাশ করিল না। বলিল, বাবু এখনি সেরে যাবে,—জমন মাঝে মাঝে হয় । তাহার পর মুখে-চোখে জল দেওয়া হইল, বাতাস করা হইল, বিশু আসিয়া বার-দুই চুল টানাটানি করিয়া ডকিল, মা ! সরযুর চৈতন্য হইল, লজ্জিত হইয়া মাথায় কাপড় টানিয়া দিয়া উঠিয়া বসিল। লধীয়ার মা আপনার কাজে চলিয়া গেল। ভয়ে চন্দ্রনাথের মুখ কালি হইয় গিয়াছিল । সরযু হাসিল। বড়-ক্ষীণ, অথচ বড় মধুর হাসিয়া বলিল, ভয় পেয়েছিলে ? চন্দ্রনাথের দুই চোখে জল টল্টল করিতেছিল, এইবারে গড়াইয়া পড়িল, হাত দিয়া মুছিয়া ফেলিল বলিল, ভেবেছিলাম বুধি সব শেষ হয়ে গেল । সরযু মনে মনে ভাবিল, তোমার কোলে মাথা ছিল—সে স্বকৃতি কি এ হতভাগিনীর আছে ? প্রকাশ্বে কহিল, এমন ধারা মাঝে মাঝে হয় । তা দেখছি! তখন হ’ত না, এখন হয়, সেও বুঝি। বলিয়া চন্দ্রনাথ বহুক্ষণ নিঃশবে স্থির হইয়া বসিয়া রহিল । তাহার পর পকেট হইতে মরিচ-ধরা একটা চাবির গোছা বাহির করিয়া সরযুর আঁচলের খুটে বাধিয়া দিয়া বলিল, এই তোমার চাবির রিং—আমার কাছে গচ্ছিত রেখে চ’লে এসেছিলে, আজ আবার ফিরিয়ে দিলাম। চেয়ে দেখ, কখনও কি ব্যবহার হয়েচে ব’লে মনে ङ्ख्न । সরযু দেখিল, তাহার আদরের চাবির রিং মরিচ ধরিয়া একেবারে ময়লা হইয়া গিয়াছে। হাতে লইয়া বলিল, তাকে দাওনি কেন ? চন্দ্রনাথের শুষ্ক মানমুখ অকস্মাং অকৃত্রিম হাসিতে ভরিয়া গেল, দুই চোখে অসীম স্নেহ চঞ্চল হইয়া উঠিল, তথাপি নিজেকে সংযত করিয়া বলিল, তাকেই ত দিলাম, সরযু।