পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সেই পর্ণকুটারের বারানার উপরে বিস্তর ছেড়া চাটাই ও ছেড়া কঁথার বিছানায় বসিয়া একটা দীর্ঘকায় পাতলা-গোছের লোক প্রবল কাসির পরে ইাপাইতেছে। তাহার মাথায় জটা উচু করিয়া বাধ, গলায় বিবিধ প্রকারের ছোটবড় মালা। গায়ের জাম এবং পরনের কাপড় অত্যন্ত মলিন এবং এক প্রকার হলদে রঙে ছোপানো । তাহার লম্বা দাড়ি বস্ত্রধগু দিয়া জটার সহিত বাধা ছিল বলিয়াই প্রথমট চিনিতে পারি নাই ; কিন্তু কাছে আসিয়াই চিনিলাম সে সাপুড়ে। মাস পাঁচ-ছয় পূৰ্ব্বে তাহাকে প্রায় সৰ্ব্বত্রই দেখিতাম। আমাদের বাটতেও তাহাকে কয়েকবার সাপ খেলাইতে দেখিয়াছি। ইন্দ্র তাহাকে শাহ জী সম্বোধন করিল এবং সে জামাদিগকে বসিতে ইঙ্গিত করিয়া হাত তুলিয়া ইন্দ্রকে গাজার সাজ-সরঞ্জাম এবং কলিকাটি দেখাইয়া দিল । ইন্দ্র দ্বিরুক্তি না করিয়া, আদেশ পালন করিতে লাগিয়া গেল এবং প্রস্তুত হইলে শাহ জী সেই কাসির উপর ঠিক যেমন ‘মারি-বাচি পণ করিয়া টানিতে লাগিল এবং একবিন্দু ধোয়াও পাছে বাহির হইয়া পড়ে, এই আশঙ্কায় নাকেমুখে বাম করতল চাপা দিয়া মাথায় একটা ঝাকানির সহিত কলিকাটি ইন্দ্রের হাতে তুলিয়া দিয়া কহিল, পিয়ে। ইন্দ্ৰ পান করিল না। ধীরে ধীরে নামাইয়। রাখিয়া কহিল, না । শাহ জী অতিমাত্রায় বিস্মিত হইয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিল ; কিন্তু উত্তরের জন্য এক মূহূৰ্ত্ত অপেক্ষ না করিয়াই সেটা নিজেই তুলিয়া লইয়। টানিয়া টানিয়া নিঃশেষ করিয়া উপৃড় করিয়া রাখিল । তার পরে দুজনের মুম্বকণ্ঠে কথাবার্তা শুরু হইল। তাহার অধিকাংশ শুনিতেও পাইলাম না, বুঝিতেও পারিলাম না। কিন্তু এই একটা বিষয় লক্ষ্য করিলাম, শাহ জী হিন্দিতে কথা কহিলেও ইন্দ্র বাঙলা ছাড়া কিছুই ব্যবহার করল না । শাহ জীর কণ্ঠস্বর ক্রমেই উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল, এবং দেখিতে দেখিতে তাহা উন্মত্ত চীৎকারে পরিণত হইল। কাহাকে উদ্দেশ করিয়া সে যে এরূপ অকথ্য অশ্রাব্য গালিগালাঙ্গ উচ্চারণ করিতে লাগিল, তাহ তখন বুঝিলে, ইন্দ্র সহ করিয়াছিল বটে, কিন্তু আমি করিতাম না। তারপরে লোকটা বেড়ায় ঠেস্ দিয়া বসিল এবং অনতিকাল পরেই ঘাড় গুজিয়া ঘুমাইরা পড়িল। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসিয়া থাকিয়া যেন অস্থির হই উঠিলাম, বলিলাম, বেলা যায় ; তুমি সেখানে যাবে না ? কোথায় ঐকাস্ত ? তোমার দিদিকে টাকা দিতে যাবে না ? দিদির জন্তই ত বসে আছি। এই ত তার বাড়ি । Yggo