পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বলিল, খুলে না দিদি, তোমার পায়ে পড়ি-মস্ত একটা সাপ ঘরে ঢুকেছে। তিনি আমার মুখের পানে চাহিয়া কি যেন ভাবিয়া লইলেন। তারপরে একটুখানি হাসিয়া পরিষ্কার বাঙলায় বলিলেন, তাই ত ৷ সাপুড়ের ঘরে সাপ ঢুকেছে, এ ত বড় আশ্চৰ্য্য ! কি বল কাস্ত ? আমি অনিমেষ দৃষ্টিতে শুধু তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রছিলাম –কিন্তু কি ক'রে সাপ ঢুকল ইন্দ্রনাথ । ইন্দ্র বলিল, ঝাঁপির ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। একেবারে বুনো-সাপ । উনি ঘুমোচ্চেন বুঝি ? ইন্দ্র রাগিয়া কহিল, গাঙ্গা ধেয়ে একেবারে অজ্ঞান হয়ে ঘুমোচ্চে। চেচিয়ে মরে গেলেও উঠবে না। তিনি আবার একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, আর সেই সুযোগে তুমি শ্ৰীকাস্তকে সাপ খেলানো দেখাতে গিয়েছিলে, না ? আচ্ছা এসো, আমি ধ’রে দিচ্চি । তুমি যেয়ো না দিদি, তোমাকে খেয়ে ফেলবে। শাহ জীকে তুলে দাও-আমি তোমাকে যেতে দেব না। বলিয়। ইন্দ্র ভয়ে দুই হাত প্রসারিত করিয়া পথ আগলাইয়া দাড়াইল । তাহার এই ব্যাকুল কণ্ঠস্বরে যে ভালবাসা প্রকাশ পাইল তাহা তিনি টের পাইলেন। মুহূৰ্ত্তের জন্য চোখ দুটি তাহার ছলছল করিয়া উঠিল, কিন্তু গোপন করিয়া হাসিয়া বলিলেন, ওরে পাগলা, অত পুণ্যি তোর এই দিদির নেই। আমাকে খাবে না রে -এগ খুনি ধ’রে দিচ্চি দ্যাখ। বলিয়া বীশের মাচা হইতে একটা কেরোসিনের ডিপা জালিয়া লইয়া ঘরে ঢুকিলেন এবং এক মিনিটের মধ্যে সাপটীকে ধরিয়া আনিয়া বাপিতে বন্ধ করিয়া ফেলিলেন । ইন্দ্র ঢিপ করিয়া র্তাহার পায়ের উপর একটা নমস্কার করিয়া পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া বলিল, দিদি, তুমি যদি আমার আপনার দিদি হ’তে। তিনি ডান হাত বাড়াইয়া ইন্দ্রের চিবুক স্পর্শ করিলেন, এবং অঙ্গুলির প্রাস্তভাগ চুম্বন করিয়া মুখ ফিরাইয়া বোধ করি অলক্ষ্যে একবার নিজের চোখদুটি মুছিয়া ফেলিলেন । & সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে শুনিতে ইন্দ্রর দিদি হঠাৎ বার-দুই এমনি শিহরিয়া উঠিলেন যে, ইন্দ্রর সেদিকে যদি কিছুমাত্র খেয়াল থাকিত, সে আশ্চর্ঘ্য হইয়৷ স্বাইত। সে দেখিতে পাইল না, কিন্তু আমি পাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া থাকিয়া সস্নেহে তিরস্কারের কণ্ঠে কহিলেন, ছি দাদা, এমন কাজ আর কথখনো করে না। এসব ভয়ানক জানোয়ার নিয়ে কি খেলা করতে আছে ভাই ? ভাগ্যে তোমার হাতের ডালাটায় ছোবল মেরেছিল, না হ’লে আজ কি কাও হ’ত বল ত ? 密争