পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত গ্রহণ করিতে লোকে দ্বিধা ত করিবেই, পরস্তু উদ্ভট কল্পনা বলিয়া উপহাস করিতে হয়ত ইতস্তত করিবে না । তথাপি এতটা জানিয়াও যে লিখিলাম, ইহাই অভিজ্ঞতার সত্যকার মূল্য। কারণ সত্যের উপরে না দাড়াইতে পারিলে কোনমতেই এই সকল কথা মুখ দিয়া বাহির করা যায় না। প্রতি পদেই ভয় হইতে থাকে, লোকে হাসিয়া উড়াইয়া দিবে। জগতে বাস্তব ঘটনা যে কল্পনাকেও বহুদূরে অতিক্রম করিয়া যায়, এ কৈফিয়ৎ নিজের কোন জোরই দেয় না, বরঞ্চ হাতের কলমটাকে প্রতি হাতেই টানিয়া টানিয়া ধরিতে থাকে । যাক সে কথা। দিদি যখন চোখ চাহিয়া উঠিয়া বসিলেন, তখন রাত্রি বোধ করি দ্বিপ্রহর ? তাহার বিহবল ভাবটা ঘুচাইতে আরও ঘণ্টাখানেক কাটিয়া গেল । তারপরে আমার মুখে সমস্ত বিবরণ শুনিয়া ধীরে ধীরে উঠিয়া গিয়া শাহজীর বন্ধন মুক্ত করিয়া দিয়া বলিলেন, যাও, শাও গে। লোকটি ঘরে চলিয়া গেলে ইন্দ্রকে কাছে ডাকিয় তাহার ডান হাতটা নিজের মাথার উপর টানিয়া লইয়া বলিলেন, ইন্দ্র, এই আমার মাথায় হাত দিয়া শপথ কর ভাই, আর কখনো এ বাড়িতে আসিস্নে। আমাদের যা হবার হোক, তুই আর আমাদের কোন সংবাদ রাখিস্নে । ইন্দ্র প্রথমটা অবাকৃ হইয়া রহিল । কিন্তু পরক্ষণেই আগুনের মত জলিয়া উঠিয়া বলিল, তা বটে ! আমাকে খুন করতে গিয়েছিল, সেটা কিছু নয়। আর আমি যে ওকে বেঁধে রেখেছি, তাতেই তোমার এত রাগ | এমন না হ’লে কলিকাল বলেচে কেন ? কিন্তু কি নেমকহারাম তোমরা দু'জন —আয় শ্ৰীকান্ত, অার না ! দিদি চুপ করিয়া রহিলেন—একটি অভিযোগেরও প্রতিবাদ করিলেন না। কেন যে করিলেন না, তাহ পরে যত বেশীই বুঝিয়। থাকি না কেন, তখন বুঝি নাই। তথাপি আমি অলক্ষ্যে নিঃশবে সেই টাকা পাচটি খুঁটির কাছে রাখিয়৷ দিয়া ইন্দ্রের অমুসরণ করিলাম। ইন্দ্র প্রাঙ্গণের বাহিরে আসিয়া চেচাইয়া বলিল, ছিন্নুর মেয়ে হয়ে যে মোচলমানের সঙ্গে বেরিয়ে আসে, তার আবার ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম । চুলোয় যাও—আর আমি খোজ করব না, খবরও নেব লা—হারামজাদ নচ্ছার ! বলিয়া দ্রুতপদে বনপথ অতিক্রম করিয়া চলিয়া গেল । দু-জনে নৌকায় আসিয়া বলিলে ইন্দ্র নিঃশকে বাহিতে লাগিল, এবং মাঝে মাঝে হাত তুলিয়া চোখ মুছিতে লাগিল। সে ষে কাজিতেছে, তাহা স্পষ্ট বুঝিয়া আর কোন প্রশ্ন করিলাম না। শ্মশানের সেই পথ দিয়াই ফিরিয়া আসিলাম এবং সেই পথ দিয়াই এখনও ዐፄ