পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত ইন্দ্ৰ কহিল, তা নয়। আমরা ডিঙিতে যাব । আমি নিরুৎসাহ হইয়া পড়িলাম। কারণ গঙ্গায় উজান ঠেলিয়া যাইতে হইলে বহু বিলম্ব হওয়াই সম্ভব। হয়ত বা সময়ে উপস্থিত হইতে পারা যাইবে না। ইন্দ্ৰ কহিল, ভয় নেই, জোর হাওয়া আছে ; দেরি হবে না। আমার নতুনদা কলকাতা থেকে এসেছেন, তিনি গঙ্গা দিয়ে যেতে চান । স্বাকৃ, দাড় বাধিয়া পাল খাটাইরা ঠিক হইয়া বসিয়াছি—অনেক বিলম্বে ইন্দ্রর নতুনদ আসিয়া ঘাটে পৌঁছিলেন । চাদের আলোকে তাহাকে দেখিয়া ভয় পাইয়া গেলাম। কলকাতার বাবু—অর্থাৎ ভয়ঙ্কর বাবু। সিস্কের মোজা, চকুচকে পাম্প-মু, আগাগোড়া ওভারকোটে মোড়া, গলায় গলাবন্ধ, হাতে দস্তান, মাথায় টুপি-পশ্চিমের শীতের বিরুদ্ধে তাহার সতর্কতার অস্ত নাই । আমাদের সাধের ডিজিটাকে তিনি অত্যন্ত যাচ্ছেতাই’ বলিয়া কঠোর মত প্রকাশ করিয়া ইন্দ্রর কাধে ভর দিয়া আমার হাত ধরিয়া, অনেক কষ্টে, অনেক সাবধানে নৌকার মাঝখানে জাকিয়া বসিলেন । তোর নাম কি রে ? ভয়ে ভয়ে বলিলাম, শ্রীকান্ত । তিনি দাত খি'চাইয়া বলিলেন, আবার শ্ৰী—কাস্ত— শুধু কান্ত। নে তামাক সাজ । ইন্দ্র, ইকো-কলকে রাখলি কোথায় ? ছোড়াটাকে দে—তামাক সাজুক ! ওরে বাবা ! মানুষ চাকরকেও ত এমন বিকট ভঙ্গি করিয়া আদেশ করে না । ইন্দ্র অপ্রতিভ হইয়া কহিল, শ্ৰীকান্ত, তুই এসে একটু হাল ধর, আমি তামাক সাজচি । - আমি তাহার জবাব না দিয়া তামাক সাজিতে লাগিয়া গেলাম। কারণ, তিনি ইন্দ্রর মাসতুতো ভাই, কলিকাতার অধিবাসী এবং সম্প্রতি এল. এ. পাশ করিয়াছেন। কিন্তু মনটা আমার বিগড়াইয়া গেল। তামাক সাজিয়া হুক হাতে দিতে, তিনি প্রসন্নমুখে টানিতে টানিতে প্রশ্ন করিলেন, তুই থাকিস্ কোথায় রে কান্ত ? তোর গায়ে ওটা কালোপান কি রে? র্যাপার ? আহাঁ, র্যাপারের কি ঐ ! তেলের গন্ধে ভূত পালায়। ফুটচে—পেতে দে দেখি বসি । আমি দিচ্চি নতুনদা। আমার শীত করবে না—এই নাও ; বলিয়। ইন্দ্র নিজের গায়ের আলোয়ানটা তাড়াতাড়ি ছুড়িয়া ফেলিয়া লি। তিনি সেটা জড়ো করিয়া লইয়া বেশ করিয়া বসিয়া মুখে তামাক টানিতে লাগিলেন। শীতের গঙ্গা। অধিক প্রশস্ত নয়, আধঘণ্টার মধ্যেই ডিঙি ওপারে গিয়া ভিড়িল । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বাতাস পড়িয়া গেল । 42