পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দেখেচেন বলেন—হয় তারা ঠকেচেন, না হয় তারা মিথ্যাবাদী—এই আমার ধারণা। . ভদ্রলোক খপ করিয়া আমার ডান হাতটা চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, আপনি জাজ রাত্রে শ্মশানে যেতে পারেন ? আমি হাসিয়া বলিলাম, পারি। আমি ছেলেবেল থেকে অনেক শ্মশানেই অনেক রাত্রে গেছি। বৃদ্ধ চটিয়া উঠিয়া বলিলেন, আপ সেবি মং করে বাবু। বলিয়া তিনি সমস্ত শ্ৰোতৃবর্গকে স্তম্ভিত করিয়া, এই শ্মশানের মহা ভয়াবহ বিবরণ বিবৃত করিতে লাগিলেন। এ শ্মশান ষে যে-গে স্থান নয়, ইহা মহাশ্মশান, এখানে সহস্ৰ নরমুণ্ড গণিয়া লইতে পারা যায়, এই শ্মশানে মহাভৈরবী তার সাঙ্গোপাঙ্গ লইয়া প্রত্যহ রাত্রে নরমুণ্ডের গেণ্ডুয়া খেলিয়া নৃত্য করিয়া বিচরণ করেন, তাহাদের খল্‌খল হাসির বিকট শকে কতবার কত অবিশ্বাসী ইংরাজ জজ-ম্যাজিস্ট্রেটেরও হস্পিন্দন থামিয়া গিয়াছে—এমৃনি সব লোমহর্ষণ কাহিনী এমন করিয়াই বলিতে লাগিলেন যে, এত লোকের মধ্যে দিনের বেলা তাবুর ভিতরে বসিয়া থাকিয়াও অনেকের মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হইয় উঠিল । আড়চোথে চাহিয়! দেখিলাম, পিয়ারী কোন এক সময়ে কাছে ঘোঁসিয়া আসিয়; বসিয়াছে এবং কথাগুলো যেন সৰ্ব্বাঙ্গ দিয়া গিলিতেছে। এইরূপে এই মহাশ্মশানের ইতিহাস যথন শেষ হইল, তখন বক্তা গৰ্ব্বভরে আমার প্রতি কটাক্ষ হানিয়া প্রশ্ন করিলেন, কেয়া বাৎসাহেব, আপ, যায়েগা ? যায়গা বৈকি । যায়েগা । আচ্ছা, আপকা খুশি । প্রাণ যানেসে— আমি হাসিয়া বলিলাম, না বাবুজী, না । প্রাণ গেলেও তোমাকে দোষ দেওয়া হবে না, তোমার ভয় নেই। কিন্তু অজানা জায়গায় আমি ত শুধু হাতে যাব না-- বন্দুক নিয়ে যাব। তখন আলোচনাট একটু অতিমাত্রায় থর হইয়। উঠিল দেখিয়া আমি উঠিয়া গেলাম। আমি পাখি মারিতে পারি না, কিন্তু বন্দুকের গুলিতে ভূত মারিতে পারি ; বাঙালীরা ইংরাজী পড়িয়া হিন্দুশাস্ত্র মানে না ; তাহারা মুরগি খায় ; তাহারা মুখে ষণ্ডই বড়াই করুক, কাৰ্য্যকালে ভাগিয়া যায় , তাহাদিগকে তাড় দিলেই তাহাদের দাতকপাটি লাগে---এই প্রকারের সমালোচনা চলিতে লাগিল! অর্থাৎ যে সকল সূক্ষ্ম যুক্তিতর্কের অবতারণা করিলে আমাদের রাজা-রাজড়াদের আনন্দোয় হয় এবং তাছাদের মস্তিষ্ককে অতিক্রম করিয়া যায় ন—অর্থাৎ তাহারাও দুকথা কহিতে পারেন, সেই সব কথাবাৰ্ত্ত ।