পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অন্ধকারের পানে চাহিয়া আমার আর একটা অমা রজনীর কথা মনে পড়িয়া গেল, সে দিনটাও এমনি শনিবারই ছিল । বৎসর পাঁচ-ছয় পূৰ্ব্বে আমাদের প্রতিবেশিনী হতভাগিনী নিকদিদি বালবিধবা হইয়াও যখন স্থতিকা রোগে আক্রাস্ত হইয়া ছয় মাস ভুগিয়া ভুগিয়া মরেন, তখন সেই মৃত্যুশয্যার পাশে আমি ছাড়া আর কেহ ছিল না। বাগানের মধ্যে একখানি মাটির ঘরে তিনি একাকিনী বাস করিতেন। সকলের সর্বপ্রকার রোগে, শোকে, সম্পদে, বিপন্ধে এতবড় সেবাপরায়ণ , নিঃস্বার্থ পরোপকারিণী রমণী পাড়ার মধ্যে আর কেহ ছিল না । কত মেয়েকে তিনি ষে লেখাপড়া শিখাইয়া, স্বচের কাজ শিখাইয়া, গৃহস্থালির সর্বপ্রকার দুরূহ কাজকৰ্ম্ম শিখাইয়া দিয়া, মানুষ করিয়া দিয়াছিলেন তাহার সংখ্যা নাই। একান্ত স্নিগ্ধ শাস্তস্বভাব এবং সুনিৰ্ম্মল চরিত্রের জন্য পাড়ার লোকও তাহকে বড় কম ভালবাসিত না । কিন্তু সেই নিরুদিদির ত্রিশ বৎসর বয়সে হঠাৎ যখন পা-পিছলাইয়। গেল এবং ভগবান এই সুকঠিন ব্যাধির আঘাতে তাহার আজীবন উচু মাথাটি একেবারে মাটির সঙ্গে একাকার করিয়া দিলেন, তখন পাড়ার কোন লোকই দুর্ভাগিনীকে তুলিয়া ধরিবার জন্য হাত বাড়াইল না। দোষম্পৰ্শলেশহীন নিৰ্ম্মল হিন্দুসমাঙ্গ হতভাগিনীর মুখের উপরেই তাহার সমস্ত দরজা-জানাল আঁটিয়া বন্ধ করিয়া দিলেন। সুতরাং যে পাড়ার মধ্যে এমন একটি লোকও বোধ করি ছিল না, ষে কোন-না কোন প্রকারে নিরুদদির সযত্ন সেবা উপভোগ করে নাই, সেই পাড়ারই এক প্রান্তে অস্তিমশয্যা পাতিয়া এই দুর্ভাগিণী ঘূণায় লজ্জায়, নি:শব্দে নতমুখে একাকিনী দিনের পর দিন ধরিয়া এই সুদীর্ঘ ছয়-মাসকাল বিনা চিকিৎসায় তাহার পদস্থলনের প্রায়শ্চিত্ত সমাধা করিয়া প্রাবণের এক গভীর রাত্রে ইহকাল ত্যাগ করিয়! যে-লোকে চলিয়া গেলেন তাহার অভ্রান্ত বিবরণ যে-কোনো স্মাৰ্ত্ত ভট্টাচাৰ্য্যকে জিজ্ঞাসা করিলেই জানা যাইতে পারিত । - আমার পিসীমা যে অত্যন্ত সঙ্গোপনে তাহাকে সাহায্য করিতেন, এ কথা আমি . এবং বটার বুঢ়ীঝি ছাড়া আর জগতে কেহই জানে না। পিসীম একদিন দুপুরবেলা আমাকে নিভৃতে ডাকিয় বলিলেন, বাবা ঐকাত্ত, তোর। ত এমন অনেকেরই রোগে শোকে গিয়ে দেখিস ; এই ছুড়িটাকে এক অধিবার গিয়ে দেখিস না । সেই অবধি আমি মাঝে মাঝে গিয়া দেখি ঠাম এবং পিসীমার পয়সায় এটা-ওটা-গেট কিনিয়া দিয়া আসিতাম। র্তার শেষকালে একা আমিই কাছে ছিলাম। মরণকালে আমন পরিপূর্ণ বিষ্কার এবং পরিপূর্ণ জ্ঞান আমি আর দেখি নাই। বিশ্বাস না করিলেও ষে ক্ষয়ে গ৷ ছমু ছমৃ করে, আমি সেই কথাটাই বলিতেছি। stes