পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৯৬

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এমন কত কি যে উদ্ভট আকাশ-কুস্কমের মালা গাথা—সে সব মনে করিলেও এখন হাসি পায় ; চোখে জলও বড় কম পড়ে না । তখন মনের মধ্যে এ বিশ্বাস হিমাচলের মত দৃঢ়ও ছিল, আমাকে ভুলাইতে পারে, এমন নারী ত ইহলোকে নাই-ই, পরলোকে আছে কি না, তাহাও যেন ভাবিতে পারিতাম না । মনে করিতাম, জীবনে যদি কখনো কাহারো মুখে এমনি মৃদু কথা, ঠোঁটে এমনি মধুর হাসি, ললাটে এমনি অপরূপ আভা, চোখে এম্নি সজল করুণ চাহনি দৃেথি, তবে চাহিয়া দেখিব । যাহাকে মন দিব, সেও যেন এম্নি সতী, এমনি সাধবী হয়। প্রতি পদক্ষেপে তাহারও যেন এম্নি অনিৰ্ব্বচন মহিমা ফুটিয়া উঠে, এমনি করিয়া সেও ষেন সংসারের সমস্ত স্থখ-দুঃখ, সমস্ত ভাল-মন্দ, সমস্ত ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়াই গ্রহণ করিতে পারে। সেই ত আমি। তবুও আজ সকালে ঘুম-ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই কাহার মুখের কথা, কাহার ঠোঁটের হাসি, কাহার চোখের জল মনে পড়িয়া বুকের একাস্তে একটুখানি ব্যথা বাজিল ? আমার সন্ন্যাসিনী দিদির সঙ্গে কোথায় কোন অংশে কি তাহার বিন্দু পরিমাণও সাদৃশ্ব ছিল ? অথচ, এমনিই বটে। ছয়টা দিন আগে, আমার অন্তৰ্য্যামী আসিয়াও যদি একথা বলিয়া যাইতেন, আমি হাসিয়া উড়াইয়া দিয়া বলিতাম, অন্তৰ্য্যামী! তোমার এই শুভ কামনার জন্য তোমাকে সহস্র ধন্যবাদ! কিন্তু তুমি তোমার কাজে যাও, আমার জন্য চিস্তা করিবার আবশ্বকতা নাই। আমার বুকের কষ্টিপাথরে পাকা সোনার কষ ধরানো আছে, সেখানে পিতলের দোকান খুলিলে খরিদার জুটিবে না । কিন্তু তবু ত খরিদার জুটল। আমার অস্তরের মধ্যে যেখানে অন্নদাদিদির আশীৰ্ব্বাদে পাকা সোনার ছড়াছড়ি তার মধ্যেও যে এক তুর্ভাগ্য পিতলের লোভ সামলাইতে পারিল না, কিনিয়া বসিল—এ কি কম আশ্চর্য্যের কথা ! আমি বেশ বুঝিতেছি, যারা খুব-কড়া সমঝদার তারা আমার আত্মকথার এইখানে অধীর হইয়। বলিয়া উঠিবেন, বাপু, এত ফেনিয়ে কি বলতে চাও তুমি ? বেশ স্পষ্ট করেই বল না, সেটা কি ? আজি ঘুম ভাঙ্গিয়াই পিয়ারীর মুখ মনে করিয়া তোমার ব্যথা বাজিয়াছিল এই ত? যাহাকে মনের দোরগোড়া হইতে কঁাটাইয়া বিদায় করিতেছিলে, আজ তাহাকেই ডাকিয়া ঘরে বসাইতে চাহিতেছ--এই ত ? তা বেশ ! এ যদি সত্য হয়, তবে এর মধ্যে তোমার অন্নদাদিদির নামটা আর তুলিয়ে না। কারণ তুমি যত কথা যেমন করিয়াই সাজাইয়া বল না কেন, আমরা মানবচরিত্র বুঝি। জোর করিয়া বলিতে পারি, সে সতী-সাথীর আদর্শ তোমার মনের মধ্যে স্থায়ী হয় নাই, তাহাকে তোমার লমন্ত মন দিয়া কম্মিনকালেও ሸውቁ