পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কে বললে আমি পালিয়ে এলুম ? আমি বলচি । জানলেন কি করে ? জানলুম তোমার মূখ দেখে । বন্দন ক্ষণকাল তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া থাকিয়া কহিল, দ্বিজুবাবু একদিন বলেছিলেন দাদার চোথে কিছুই এড়ায় না। কথাটা যে কতখানি সত্যি আমি বিশ্বাস করিনি। আপনার অমুখ আমি চাইনে, কিন্তু এ আমাকে সত্যিই উদ্ধার করেচে। সত্যিই পালিয়ে এসে আমি বেঁচে গেছি। ষে কটা দিন আপনি অসুস্থ আমি আপনার কাছেই থাকবে, তার পরে সোজা বাবার কাছে চলে যাবে।—মাসীর বাড়িতে আর ফিরবো না। দূর থেকে যাদের দেখতে চেয়েছিলুম তাদের দেখা পেয়ে গেছি, এমন ইচ্ছে আর নেই যে একটা দিনের জন্যেও ওদের মধ্যে গিয়ে কাটিয়ে আসি । বিপ্রদাস নীরবে চাহিয়া রহিল। বন্দন বলিতে লাগিল, ওদের শুধু শাড়ি গাড়ি আর মিথ্যে ভালোবাসার গল্প। কোথায় নৈনি আর কোথায় মুসৌরির হোটেল আমি জানিওনে, কিন্তু ওদের মুখে-মুখে তার কি-যে নোঙর চাপ ইঙ্গিত,—শুনতে শুনতে ইচ্ছে হ’তো, কোথাও যেন ছুটে পালিয়ে যাই । আজ এই ঘরের মধ্যে বসে মনে হচ্ছে যেন এই ক’টা দিন অবিশ্রাম এলো-মেলো ধূলোবালির ঘূর্ণি-ঝড়ের মধ্যে আমার দিন-রাত কেটেচে । এর ভেতর ওরা বঁাচে কি করে মুখুয্যেমশাই ? বিপ্রদাস বলিল, সে রহস্য আমার জানার কথা নয় । মরুভূমির মধ্যে কবরগুলো যেমন টিকে থাকে বোধ করি তেমনি করে । বন্দনা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, দুঃখের জীবন । ওদের না আছে শাস্তি, না আছে কোন ধর্মের বালাই । কিছু বিশ্বাস করে না, কেবলি করে তর্ক। একটু থামিয়া বলিল, খবরের কাগজ পড়ে, ওরা জানে অনেক। পৃথিবীর কোথায় কি নিত্য ঘটচে কিছুই ওদের অজানা নয়! কিন্তু আমি ত ও সব পড়তে পারিনে, তাই অৰ্দ্ধেক কথা বুঝতেই পারতুম না। শুনতে শুনতে যখন অরুচি ধরে যেতো তখন আর কোথাও সরে গিয়ে নিশ্বেস ফেলে বাচতুম । কিন্তু তাদের ত ক্লান্তি নেই, তারা বকতে বকতে সবাই যেন মেতে উঠতো । কিন্তু তোমার বাবা কাছে থাকলে স্ববিধে হত বন্দন । খবরের কাগজের সব খবর তাকে জিজ্ঞেস করলেই টের পেতে—ওদের কাছে ঠকতে হতো না । বন্দন৷ হাসিমুখে সায় দিয়া বলিল, ই, বাবার সে বাতিক আছে। সমস্ত খবর খুটিয়ে না পড়ে তার তৃপ্তি নেই। কিন্তু আমাদের মেয়েদের তাতে দরকার কি বলুন ত? কি হবে জেনে পৃথিবীর কোথায় কি দিন-রাত ঘটচে ? જે ૨