পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মেয়েদের ভালোবাসায় বোধ হয় আর আপনার প্রয়োজন নেই—ন ? এ প্রশ্নের মানে ? মানে জানিনে, এমনি জিজ্ঞাসা করচি। এ বোধ হয় আর আপনি কামনা করেন না,—আপনার কাছে একেবারে তুচ্ছ হয়ে গেছে —সত্যি কি-না বলুন । বিপ্রদাস উত্তর দিল না, শুধু হাসিমুখে চাহিয়া রহিল। নীচের প্রাঙ্গণে সহসা গাড়ির শব্দ শোনা গেল, আর পাওয়া গেল দ্বিজদাসের কণ্ঠস্বর। এর পরক্ষণেই দ্বারের কাছে আসিয়া অন্নদা ডাকিয়া বলিল, দ্বিজু এলো বিপিন । একলা নাকি ? না, আর কেউ সঙ্গে এলো ? না, একাই ত দেখচি। আর কেউ নেই। শুনিয়া বন্দন ব্যস্ত হইয়া উঠিল, বলিল, যাই মুখুয্যেমশাই, দেখিগে তার খাবার যোগাড় ঠিক আছে কি না । বলিয়া বাহির হইয়া গেল । সকালে দ্বিজু আসিয়া যখন বিপ্রদাসের পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল তখন ঘরের একধারে বসিয়া বন্দনা পূজার সজ্জা প্রস্তুত করিতেছিল, দ্বিজদাস বলিল, এই পঞ্চমীতে মায়ের পুকুর প্রতিষ্ঠা। বৃহৎ ব্যাপার দাদা ? মায়ের কাজে ত বৃহৎ ব্যাপারই হয় দ্বিজু, এতে ভাবনার কি আছে ? বলিয়া বিপ্রদাস হাসিল । দ্বিজদাস কহিল, তা হয় । এবার সঙ্গে মিলেছে বামুর ভালো হওয়ার মানতপূজো-সেও একটা অশ্বমেধ যজ্ঞ। অধ্যাপক বিদায়ের ফর্দ তৈরী হচ্ছে,-কুটুম্বস্বজন অতিথি-অভ্যাগতের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা বৌদিদির মুখে মুখে পেলুম তাতে আশঙ্কা হয় এবার আপনার অর্থে ওরা কিঞ্চিং গভীর থাবোল মারবে । সময় থাকতে সতর্ক হোন । বন্দন মুখ তুলিল না, কিন্তু সামলাইতে না পারিয়া হাসিয়া লুটাইয়া পড়িল । বিপ্রদাস বিষয়ী লোক, বিপ্রদাস কুপণ, এ দুর্নাম একা মা ছাড়া প্রচার করিবার স্বযোগ পাইলে কেহ ছাড়ে না। বিপ্রদাস নিজেও এ-হাসিতে যোগ দিয়া বলিল, এবার কিন্তু তোর পালা । এবার খরচ হবে তোর । আমার ? কোন আপত্তি নেই যদি থাকে। কিন্তু তাতে ব্যবস্থার কিছু অদলবদল করতে হবে। বিদায় যারা পাবে তারা টোলের পণ্ডিত-সমাজ নয়, বরঞ্চ টোলের দোর বন্ধ করে যাদের বাইরে ঠেলে রাখা হয়েচে—তারা । বিপ্রদাস তেমনই হাসিয়া কহিল, টোলের ওপর তোর রাগ কিসের ? লোকের মুখে-মুখে এদের শুধু নিন্দেই শুনলি, নিজে কখনও চোখে দেখলিনে। ওদের দল-ভূক্ত বলে হয়ত আমি পৰ্য্যন্ত তোর আমলে ভাত পাবো না ।

  • * *